ড. জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় : উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ রসায়ন বিজ্ঞানী

| মঙ্গলবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

অধ্যাপক ড.জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় (১৮৯৭১৯৭০)। প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ। ভারতে উপক্ষার সংশ্লেষণ গবেষণায় অন্যতম পথিকৃৎ। জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়ের জন্ম ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরে তিল্লীগ্রামে। পিতা পূর্ণচন্দ্র রায় ছিলেন একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং ভারতে দিয়াশলাই শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবসায়ী। তাঁর বাল্যকাল কেটেছে রাজশাহীর মাতুলালয়ে। কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনার চেয়ে তার খেলাধূলা ও নাটকে আগ্রহ বেশি ছিল। এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পাসের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে রসায়ন শাস্ত্রে এমএসসিতে প্রথম হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে রসায়ন বিভাগের লেকচারারের পদে যোগদান করে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের তত্ত্বাবধানে জৈব রসায়ন গবেষণা শুরু করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভ্রমণবৃত্তি নিয়ে ইংল্যাণ্ডে যান ও নোবেল পুরস্কারবিজয়ী জৈব রসায়নবিজ্ঞানী স্যার রবার্ট রবিনসনের অধীনে গবেষণায় রত হন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে স্যার রবিনসনের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি যে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন তা যোজ্যতার আধুনিক ইলেকট্রনিক তত্ত্বের ভিত্তিস্বরূপ। ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যাপনা ও গবেষণা এবং অস্ট্রিয়ার গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক প্রেগলের সঙ্গে মাইক্রোরসায়ন বিষয়েও গবেষণা করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে ফিরে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হন। এখানে দীর্ঘকাল অধ্যাপনার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ড্রাগস ও ড্রেসিং দপ্তরের অধিকর্তা হন। এই সময় রণাঙ্গনে প্রয়োজনীয় প্রধান প্রধান ভেষজ ও রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতের কেন্দ্র সারা দেশে গড়ে তোলবার ব্যাপারে বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেন। এরপর ভারত সরকারের শিল্প ও সরবরাহ বিভাগের সহঅধিকর্তা নিযুক্ত হন এবং ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্যালকাটা কেমিক্যালএ প্রধান শিল্পও গবেষণা উপদেষ্টা রূপে যোগদান করে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। তার রচিত ১৮০টির বেশি মৌলিক গবেষণা নিবন্ধ ভারত, ব্রিটেন, আমেরিকা ও জার্মানীর নানা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ সম্পর্কে তার একটি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান বারবেরিন উপক্ষারের সংশ্লেষণ। আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্রের প্রিয় শিষ্য ‘জ্ঞানত্রয়ে’র তিনি অন্যতম। তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবিবর্তনের ঈদ আনন্দ