৭ জানুয়ারি ৯৫ শতাংশ মানুষ বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি সংগ্রাম করছে। যতদিন সরকার পদত্যাগ না করবে ততদিন এ সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার এ সংগ্রাম চলবে। দেশি–বিদেশি কোনো শক্তি এ অবৈধ সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখতে পারবে না। তাদের বিদায় নিতে হবে। এরপর বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে এমন সরকার গঠন করবে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ সেই সরকারের অপেক্ষায় আছে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন একটি কমিউনিটি সেন্টারে দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সম্মাননা অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম। এতে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে’ দক্ষিণ জেলা বিএনপির ২০০ জন কারাবন্দী নেতাকর্মীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বিএনপির চলমান সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, চলমান আন্দোলনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা সবাই মিলে আজ যে জাতীয় ঐক্য হয়েছে, যে ৯৫ শতাংশ মানুষ এ সরকারকে প্রত্যাখান করেছে, তাদের নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা এ আন্দোলনকে সফল করব, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।
তিনি বলেন, ৭ই জানুয়ারিতে কী হয়েছিল? ডামি প্রধানমন্ত্রী, ডামি এমপি, ডামি নির্বাচন। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে, বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছে। আর যিনি আজ প্রধানমন্ত্রীর আসনে অবৈধভাবে বসে আছেন, ৫ শতাংশ মানুষও তার পক্ষে আসেনি, ভোটকেন্দ্রে আসেনি অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ এ অবৈধ রেজিমকে প্রত্যাখান করেছে। বাংলাদেশের এ অবৈধ নির্বাচনী কার্যক্রমকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের মানুষ ঐকব্যদ্ধভাবে একটা ঐক্যজোট সৃষ্টির মাধ্যমে গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, আইনের শাসনের পক্ষে, বাকস্বাধীনতার পক্ষে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের পক্ষে পরিষ্কার রায় দিয়েছে ৭ তারিখ।
খসরু বলেন, আজ বাংলাদেশে শুধু রাজনৈতিক দলের ঐক্য ঘটেনি, ৯৫ শতাংশ মানুষের ঐক্য ঘটেছে। সুশীল সমাজ, যারা আগে মুখ খুলত না, তারাও পরিষ্কার ভাষায় এ অবৈধ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা আজ গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে। পেশাজীবীরা বলছে। এমনকি গণমাধ্যমে যারা আছে, যারা যারা শুধু শেখ হাসিনার সুবিধাপ্রাপ্ত গণমাধ্যম, তার বাইরের গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমের কর্মীরাও প্রত্যাখ্যান করেছে। তারাও আজ গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছে। তারাও আজ বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আগামী দিনে মুক্ত গণমাধ্যমের অপেক্ষায় তারা আছে। একজন জার্নালিস্ট যেন সসম্মানে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেই অপেক্ষায় আছে। আজ সবাই ওইদিনের অপেক্ষায়, যেদিন এ ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় হয়ে একটি মুক্ত বাংলাদেশে, মুক্ত আবহাওয়ায়, মুক্ত মানুষ হিসেবে বাঁচার জন্য আগামী দিনের সংগ্রামের অপেক্ষায় আছে।
গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ডামি ভোটে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ গ্যাস–বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে সরকার। সরকারের ব্যর্থতা, লুটপাট, অব্যবস্থাপনার কারণে এমনিতেই জনগণ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। এর মধ্যে দফায় দফায় সব পণ্যের দাম বাড়ানোয় মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চাপ পড়ছে। সরকারের দুর্নীতির মাশুল দিতে হচ্ছে জনগণকে।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে নিয়ে গেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা না করে আওয়ামী লীগ লুটপাট আর অবৈধ ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিএনপিকে দমানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে।
জালাল উদ্দীন মজুমদার বলেন, নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। দেশ আজ খুনি লুটেরাদের স্বর্গভূমিতে পরিণত হয়েছে।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, এ সরকার দেশকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলেছে। বর্তমানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। আগামী দিনে এই ভোট চোর সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আবু সুফিয়ান বলেন, বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন সরকার জনগণের কথা চিন্তা করছে না। জনগণের উপর জুলুম, নির্যাতন করে তারা লুটপাটের অর্থ বিদেশে পাচার করছে।
এনামুল হক এনাম বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি। সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে কখনোই ব্যর্থ হয় নাই।