মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এতে রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটও। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে একটি অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এবার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে চোরাইপথে মিয়ানমারে পাচারকালে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল, ওষুধ ও ময়দা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় দুজন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি রাতে টেকনাফের হাতিয়ারঘোনা থেকে এসব পণ্য উদ্ধার করে র্যাব–১৫। র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানায়, টেকনাফের হাতিয়ারঘোনা এলাকায় জনৈক আবুল বাশার হাজির মুরগির খামার সংলগ্ন ভিটা এলাকায় একটি পাচারকারী চক্র অবস্থান করছে–এই খবর পেয়ে ওই স্থানে র্যাব–১৫, সিপিসি–১, টেকনাফ ক্যাম্পের দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে দুজন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় একটি জিপসহ মোট ৮৯৫টি বোতলে ৪ হাজার ৪৭০ লিটার সয়াবিন তেল, বিভিন্ন প্রকারের ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫০ পিস ঔষধ ও ১০টি বস্তায় মোট ৫০০ কেজি ময়দা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
আটক দুই পাচারকারী হলেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিরঘোনা এলাকার আবুল বশরের পুত্র আবদুল মান্নান (২৪) ও একই এলাকার মৃত আলী হাছনের পুত্র আলী হোসেন (৪৫)।
জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এই চোরাচালানের সাথে জড়িত। তারা পরস্পরের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাইকারি দামে ভোজ্যতেল, ঔষধ, ময়দা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিজেদের হেফাজতে মজুদ করতেন। আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য পরে সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে চোরাইপথে মিয়ানমারে পাচার করতেন।
গত জানুয়ারি মাসে র্যাব–১৫ এর পরিচালিত অভিযানে ৯ জন পাচারকারীকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। একই সাথে তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় ৫ হাজার ৩৮৫ লিটার অকটেন, ৪০ কেজি পেঁয়াজ, ৩১ কেজি রসুন, ৩৬ কেজি আদা এবং পরিবহন কাজে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ, নগদ ১৮ হাজার ১০০ টাকা, ৩টি বাটন ও ৪টি স্মার্টফোন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী এক জোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বাহিনীগুলো হলো তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি–টিএনএলএ, আরাকান আর্মি–এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি–এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।