সুচিত্রা সেন (১৯৩১–২০১৪) । বাংলা চলচ্চিত্রে চিরদিনের, চিরকালের অবিস্মরণীয় এক বিস্ময় মহানায়িকা। ১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন ‘সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’ জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার সদর পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। পৈত্রিক নিবাস সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙাবাড়ি গ্রাম। তার বাবার নাম করুণাময় দাশগুপ্ত ও মা ইন্দিরা দেবী। তাঁর আসল নাম রমা দাশগুপ্ত। সুচিত্রা সেন পর্দা–নাম। পাবনা শহরের দিলালপুরের বাড়িতে কেটেছে তাঁর শৈশব–কৈশোর। ১৯৪৭–এ দেশবিভাগের আগেই পরিবারের সাথে কলকাতা চলে যান। সুচিত্রা সেনের চলচ্চিত্রে অভিষেক ১৯৫২ সালে। প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ মুক্তি পায় নি। মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবির নাম ‘সাত নম্বর কয়েদি’। তবে ১৯৫৪ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে সুচিত্রা সেনের জয়যাত্রা শুরু। তাঁর অভিনীত বাংলা ছবির সংখ্যা ৫০–এর অধিক। এছাড়া ৭টি হিন্দি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমার ছাড়াও সুচিত্রা বিকাশ রায়, বসন্ত চৌধুরী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক কুমার এবং হিন্দিতে দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, ধর্মেন্দ্র ও সঞ্জীব কুমারের সাথে অভিনয় করেছেন। সুচিত্রা–উত্তম জুটি ছিল সবচেয়ে রোমান্টিক ও জনপ্রিয়। এই জুটির একসাথে করা ছবির সংখ্যা ৩০। রূপালি পর্দার এই জুটির আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার সেই সময়ে সুচিত্রা সেন হয়ে উঠেছিলেন কোটি কোটি তরুণের স্বপ্নের মানুষ। আর নারীদের অনুসরণীয়। সুচিত্রা–উত্তম অভিনীত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘শাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘পথে হলো দেরী’, ‘হারানো সুর’, ‘গৃহদাহ’, ‘সাগরিকা’ ইত্যাদি। সুচিত্রা সেন অভিনীত সবশেষ ছবি ‘প্রণয়পাশা’ মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। এরপর তিনি আর কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি। একসময় অভিনয় ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন।
১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে শোনা যায়, ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল; কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।