দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যে বিবৃতি দিয়েছে, তা নিয়ে সরকার ভাবছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে তাদের বিবৃতি নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ওগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা নাই। আমাদের জনগণ রায় দিয়েছে এবং অন্যান্য দেশ আমাদের পক্ষেই। যারা এসেছে সবাই বলেছে যে, দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচন হয়েছে। এবং নির্বাচন কমিশনকে সবাই ধন্যবাদও দিয়েছে। সেটাই এবং আমরা এটা নিয়ে অনেক খুশি।
ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ নির্বাচনকে স্বাগত জানালেও পৃথক বিবৃতিতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তারা বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি। সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলে, বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ আসনেই জয়লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজারো সদস্যের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি এবং সব দল এতে অংশ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, গণতন্ত্রের যেসব মানদণ্ড রয়েছে, গত ৭ জানুয়ারির ভোট সে অনুযায়ী হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের হাতে ভোট দেওয়ার জন্য সকল বিকল্প উপস্থিত ছিল না বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সুসম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে সব ধরনের সহযোহিতা চালিয়ে যাওয়ার কথা বিবৃতিতে বলেছে যুক্তরাজ্য।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার লনে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের মিশন প্রধানদের নিয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এমন বিবৃতির বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, বুদ্ধিজীবী, দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ব্রিফ করার জন্য ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ না করে নতুন বছরের ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ অনুষ্ঠানটি চলে।
নির্বাচন এবং এর আগে–পরের পরিবেশ পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিথিদের কাছে একটি ‘ব্রিফিং নোট’ তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকায় কর্মরত প্রায় সব বিদেশি মিশনের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের পাশাপাশি দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিবৃতির বিষয়ে করা প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণ নির্বাচনে গেছে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে, এটাই তো বড় কথা, যে জনগণ তাদের ভোটাধিকার আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আমরা এজন্য গর্বিত।
তিনি বলেন, দেশে কী হচ্ছে না হচ্ছে আপনারা ভালো জানেন। আমার থেকে ভালো জানেন। আমরা খুব খুশি যে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, সংঘাতবিহীন নির্বাচন আয়োজন করেছি। জনগণ রায় দিয়েছে। এটাই যথেষ্ট। আমাদের আর কিছু দরকার নাই, জনগণ রায় দিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আরও অংশীদারত্ব, আরও সহযোগিতা এবং আরও সহায়ক পরিবেশের প্রতীক্ষা করছি। এ প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত উন্নত বাংলাদেশের গড়ার জন্য। এটা আমরা অংশীদারত্ব, সহযোগিতা ছাড়া অর্জন করতে পারব না। এবং বর্তমান বিশ্বে সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব অপরিহার্য।
গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ অনেক সফলতা অর্জন করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর অংশীদারত্ব এবং সহযোগিতার কারণে। এই বছর এবং তারপরে আরও বেশি সহযোগিতার প্রতীক্ষা আমরা করছি।
অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেঙান্দর মতিঁতস্কি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।