দেশসহ বিশ্ববাসী সম্যক অবগত আছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ পরায়ণতার হিংস্র অপকৌশলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সংঘটিত সভ্যসমাজের ইতিহাসে সর্বনিকৃষ্ট, নৃশংস ও বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের কালো অধ্যায় নির্মিত হয়। রাজনৈতিক অশুভ পটপরিবর্তনে পরাজিত অন্ধকারের অপশক্তি অতি সূক্ষ্ণ চতুরতায় দেশকে পুনরায় পাকিস্তানে রূপান্তরিত করার সকল নষ্টপন্থা অবলম্বনে দেশব্যাপী অরাজক–নিষ্ঠুর সামগ্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। বিরাজিত সকল অসঙ্গতি–বিভ্রান্তি–কদর্য পরিকল্পনাকে নসাৎ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পুনরুদ্ধার সংকল্পের কঠিন ব্রতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরের চরম কষ্টের নির্বাসিত জীবনযাপন শেষে দেশ ও দলের কঠিন দুঃসময়ে সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। অকুতোভয় সংগ্রামী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করে বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার আদায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বৈর–সামরিক সরকারবিরোধী গণআন্দোল গড়ে তোলেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরচারী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ২৩ জুন সরকার গঠনের পর জাতির জনকের হত্যার বিচার–দাবি এবং ঐতিহাসিক এই বিচারিক রায়ের কার্যকর বাস্তবায়নের মতো যুগান্তকারী কার্যক্রমের জন্য তিনি চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। মহান জাতীয় সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলকরণ ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমিমাংসিত আন্তর্জাতিক গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি সম্পাদন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি ও ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতিসহ বিপুল সংখ্যক দেশ ও জনকল্যাণমূলক কর্মযজ্ঞের সফল ও সার্থক বাস্তবায়ন অধিক মাত্রায় সমাদৃত।
২০০৯ সালে পুনরায় নির্বাচিত দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষ সরকার দুর্নীতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং সকলক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অবস্থান সুদৃঢ় করতে পেরেছিলেন বলেই ২০১৭ সাল নভেম্বর মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের ১৭৩টি দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে সততার জন্য বিশ্ব শীর্ষ পাঁচটি আসনে নিজেকে তৃতীয় স্থানে অধিষ্টিত করেছেন। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও অপকর্ম–অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত নিজ দল, দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগসহ আপন আত্মীয় স্বজন হলেও কাউকেও ছাড় না দেওয়ার ঘোষণায় দেশের সকল সচেতন–সাধারণ মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন ও আকাশচুম্বী প্রশংসায় নেত্রী নন্দিত হয়েছেন। সম্ভাষিত নতুন পালকে সুশোভিত মুকুটে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বনন্দিত ও বরেণ্য সফল রাষ্ট্রনায়কের উপমা তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বত্রই ধরিত্রী–সমুদ্র–সীমান্ত–মঙ্গা–মহাকাশ–পরিবেশ বিজয় শুধুমাত্র তাঁর নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে।
ধারাবাহিকভাবে দেশ পরিচালনায় দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন উচুমাত্রিকতায় সমাসীন করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষাসহ বিভিন্ন নীতির আলোকবর্তিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। নানামুখী বৈশ্বিক সমস্যা–সংকট উত্তরণে তাঁর অনুপম ভূমিকা এবং সামগ্রিক বিষয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তা–চেতনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আর্থ–সামাজিক–রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। বহু দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক উপ–আঞ্চলিকসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অধিকতর অত্যুজ্জ্বল। নারী নেতৃত্ব–নারী উন্নয়ন–নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল ও সংস্থার শীর্ষ বিশ্বনেতৃত্বের স্বীকৃতি শুধু নেত্রীকে নয়; প্রবোধিত আত্মপ্রত্যয় ও আত্মমর্যাদায় বাঙালি জাতি–রাষ্ট্রের অবস্থানকে বিশ্বপরিমন্ডলে করেছে সুমহান মর্যাদায় সমাসীন। স্বীয় ও রাষ্ট্রের উচুমার্গের খ্যাতিকে সুদৃঢ় করার এবং জনগণের প্রত্যাশিত আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রাখার স্বার্থেই দুরূহ কিছু সিদ্ধান্তের দৃশ্যমান বাস্তবায়ন বস্তুতপক্ষে তাঁর ধীশক্তির বিকাশ ও বিস্তার প্রাগ্র্রসর চিন্তা–চেতনার পরিচায়ক। বলিষ্ঠচিত্তে নির্ভীক স্বাধীনসত্তায় আত্মপ্রত্যয়ী এ মহীয়সী নেত্রী তথাকথিত উন্নত বিশ্বের শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু–অপপ্রচারণা এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল কূটচক্রান্ত–প্ররোচণাকে উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রতিস্থাপন করেছেন। বিশ্বব্যাংকের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এবং পদ্মাসেতু নির্মাণে মিথ্যা নাটকের অবসান ঘটিয়ে ‘আমরাও পারি’ ব্রত গ্রহণ করে পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান অবয়বে অবিস্মরণীয় এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫০ বৎসরের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রায় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিক্রমা তথা আশু–স্বল্প–দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা কার্যকরণ রোড়ম্যাপে অগ্রসরমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্রতার হার হ্রাস, মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু বৃদ্ধি, শ্রমঘন রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষায়িত ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উন্নয়ন, পোশাক ও ওষুধ শিল্পকে রপ্তানিমুখীকরণ ইত্যাদি আজ দেশের আর্থ–সামাজিক দৃশ্যপটে যুগান্তকারী অভিধায় সমুজ্জ্বল। অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামো, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীরসমুদ্র বন্দর, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, টানেল নির্মাণ, পরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয়–ব্যবহার যোগ্য পানি ও সুয়ারেজ প্রকল্পের মত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের অব্যাহত বাস্তবায়নসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট–১ উৎক্ষেপণের সফলতা–সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব পরিমন্ডলে উন্নয়ন–অগ্রগতির রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত।
যোগাযোগের অন্যতম সহজ–সাশ্রয়ী–পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ মাধ্যম রেলপথ সম্প্রসারণ–আধুনিকায়নের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশকে রেলের আওতায় নিয়ে আনার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের নেওয়া উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। রেলপথ সঞ্চারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক আগ্রহ দেশের আপামর জনসাধারণকে উৎসাহ–অনুপ্রেরণার মহাকাশে অত্যুজ্জ্বল করেছে। সরকার রেলপথ সম্প্রসারণ, নতুন রেলপথ নির্মাণ ও সংস্কার, রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরকরণ, নতুন ও বন্ধ রেল স্টেশন চালু, নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু–বৃদ্ধি, লেভেলক্রসিং গেইটসমূহের সংস্কার–আধুনিকীকরণ, কম্পিউটার বেইজড সিগনালিং ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং ট্রেনের নতুন কোচ সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে। ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি ৭৯৪টি রেলসেতু ও ২৩৭টি বিদ্যমান স্টেশন পুনঃনির্মাণ এবং কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনসহ ১৪৬টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় নতুন নতুন জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় এনে অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ আন্তর্জাতিক রেল যোগাযোগ বিশেষ করে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্ক ও সার্ক রেল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় ইতিমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে চট্টগ্রামের দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ, আখাউড়া–আগরতলা রেলপথ, খুলনা–মংলা রেলপথ ও পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প।
জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ গরিব মেহনতি জনতার সুগভীর দারিদ্রতাকে উৎপাটন করে একটি ক্ষুধা–দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন; তারই আলোকে তাঁর সুযোগ্য কন্যা ইতিমধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। সৃজনশীল মেধাকর্ম হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে দেশের ভূমি–গৃহহীন পরিবারের হাতে জমি ও সেমিপাকা বাড়ির দলিল প্রদান সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শুধু বিরল নয়; দৃশ্যমান মানবকল্যাণে বিশ্বশীর্ষ পটভূমি রচনা করেছেন। চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘ সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সেবার মডেল রূপে স্বীকৃতি দিয়েছে। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে কোনও জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা এসএমই ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করাসহ তাঁর নেতৃত্বেই একটি যুগোপযোগী জাতীয় নারী নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। দুস্থ–অসহায় নারীদের জন্য ভিজিএফ, ভিজিডি, দুস্থ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ও গর্ভবতী মায়েদের ভাতা, অক্ষম মা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের জন্য ভাতা, বিধবা ভাতা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নারী উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমান সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য বেশ কিছু নতুন নতুন কার্যক্রম চালু করে যা অন্য কোন সরকারের আমলে পরিলক্ষিত নয়। বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিক্ষা উপবৃত্তি পেয়েছে। ক্যান্সারসহ ৬টি দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্তদের সংখ্যা ৪০ হাজার জন। অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৬০ হাজার চা–শ্রমিকদের, ভাতা–প্রশিক্ষণ–উপবৃত্তি পাওয়া হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যথাক্রমে ৬ হাজার ৮৮০–১ হাজার ৯২০–১ হাজার ২২৫ জন। একইভাবে বেদে জনগোষ্ঠীর সর্বমোট ১১ হাজার ৪১৪ জনকে ভাতা–প্রশিক্ষণ ও উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয় ৬ হাজার ভিক্ষুকদের। এছাড়াও পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম এবং দগ্ধ–প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পনর্বাসনের আওতায় সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তা হয়েছে যথাক্রমে ৩৪ লক্ষ ৯০ হাজার ও ১ লক্ষ ৯১ হাজার ১৩০। ২০০৬ সালে যা ছিল ২১ লক্ষ ৭৭ হাজার ও ১ লক্ষ ১০ হাজার ২২৫। অতিসম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের ভবিষ্যৎ জীবন প্রবাহ বিবেচনা করে বহুল আলোচিত–প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সামাজিক সুরক্ষায় এক মাঙ্গলিক অধ্যায় রচিত হয়েছে।
অতিসম্প্রতি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ, মেট্্েরারেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক, চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ৩৯টি জেলায় একযোগে ১৫০টি সেতু ও ১৪টি ওভারপাসের উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ উন্নয়নে নতুন মাত্রিকতা পেয়েছে। এছাড়াও ১১ নভেম্বর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন এবং প্রথম টার্মিনাল কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ১২ নভেম্বর দেশের সবচেয়ে বড় ঘোড়াশাল–পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার উদ্বোধন, ১৩ নভেম্বর খুলনায় ২২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, সর্বশেষ ১৪ নভেম্বর পূর্বাচল ও চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েসহ দেশব্যাপী ২৪টি মন্ত্রণালয়–বিভাগের অধীনে ১৫৭টি প্রকল্পের ৫ হাজার ৩৬০টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন এবং ভূমি–গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ–২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৫ হাজার ৩৯৭টি গৃহ প্রদানের মধ্য দিয়ে সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়ন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনায় দেশের সকলকে সাথে নিয়ে ২০৪১ সালে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের এতসব অবিস্মরণীয় সাফল্যগাথা স্বল্পপরিসরের এই নিবন্ধে উপস্থাপন অত্যন্ত দুরুহ।
বিশ্বব্যাপী ডলার–জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্বগতিকে পূঁজি করে দেশীয়– আন্তর্জাতিক কুচক্রীমহলের সীমাহীন চক্রান্ত– ষড়যন্ত্রকে সংহার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষতা–বিচক্ষণতায় পরিচালিত গৌরবদীপ্ত বাংলাদেশ বিশ্বপরিমন্ডলে শুধু গৌরবোজ্জ্বল ভূখণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি; উন্নয়ন অগ্রগতির বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নির্মাণ করেছে এক অনবদ্য অধ্যায়। উন্নয়নের রোলমডেল খ্যাত দেশের প্রধান কান্ডারী জননেত্রী শেখ হাসিনা অবিচল নিষ্ঠা–দৃঢ়চেতা–প্রজ্ঞার অসাধারণ স্মারকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তাঁর ধারাবাহিক নেতৃত্বে গৌরবের উঁচুমাত্রিকতায় স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশের লালসবুজের পতাকা চিরকাল অনন্য মর্যাদায় উড্ডীন থাকেবই – নিঃসন্দেহে তা দাবি করা মোটেও অমূলক নয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়