বিএনপি রাজনীতিতে ‘অনেক ভুল’ করেছে। এমনটাই মনে করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, দলের প্রধানের মতের বাইরে এখানে ‘কিছু বলা যায় না’। ‘ইয়েস স্যার, রাইট স্যার ছাড়া আর কোনো কিছুই জানেন না।’
‘ভুল থেকে বের হয়ে আসতে’ সংস্কারের তাগিদও দেন তিনি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়া ‘ভুল ছিল’ বলে মনে করেন এই নেতা।
তিনি জানান, তিনি চান বিএনপি এবার ভোটে আসুক। এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ‘জোর না দিয়ে’ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় বিএনপির ভোটে আসাতেই জোর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হাফিজউদ্দিনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটিও উড়িয়ে দিয়েছেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “নতুন দল গড়ার যে কথা বাজারে আছে, তা ‘সঠিক নয়’। আমার শরীর ভালো নয়, দেশের বাইরে চলে যাব।”
তবে বিএনপি থেকেই তিনি অবসরে যেতে চান বলে জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘জেড’ ফোর্সে ছিলেন হাফিজ উদ্দিন। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্যে তিনি বীর বিক্রম খেতাব পান।
সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যুক্ত হন হাফিজ। ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে হাফিজকে পানিসম্পদমন্ত্রী করেন। এক যুগের বেশি সময় ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “এখন যেভাবে চলে সেভাবে কোনো রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটি করবে, কেন্দ্রীয় কমিটি জেলা কমিটি করবে, জেলা কমিটি উপজেলা কমিটি করবে, উপজেলা কমিটি ইউনিয়ন কমিটি করবে, ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটি করবে– সারা পৃথিবীতে এ রকম সিস্টেম।”
এরকম ব্যবস্থা জিয়ার সময়ে ছিল জানিয়ে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কেন সেই পথ থেকে বিচ্যুত হলাম, কেন দলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো, কেন কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে, কেন ত্যাগী নেতারা নির্বাসিত? খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী, বরিশালের মজিবুর রহমান সরওয়ার, এরা তো ত্যাগী নেতা। ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। আমি জনাব তারেক রহমানকে বলব, এই দলে সবাই আপনার অনুসারী, আপনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র।”
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ২০২০ সালে তাকে ও আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিস নিয়েও কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, “১১টি অভিযোগ ছিল আমার বিরুদ্ধে। আমি সক্রিয় না, আমি দলে কোনো কাজ করি না, সংস্কারপন্থী, আমি নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম করি… এ রকম ১১টি আজগুবি অভিযোগ ছিল। একটি ছিল যে, আমি জনাব শওকত মাহমুদের (বহিষ্কৃত) সাথে বিজয়নগর, তোপখানা রোড, হাই কোর্টের সামনে সরকারবিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা বিরোধী দল, সরকারবিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণ করতেই পারি, কিন্তু আমি এসব মিছিলে কখনই ছিলাম না। এটা আমি ডিজার্ভ করি না, যে কাজ করি নাই সেসব কাজে যদি আমাকে অভিযুক্ত করা হয়, এই ৩১ বছর বিএনপি করার পর, বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের একজন সৈনিক হিসেবে এটি আমার জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক।”