কক্সবাজারে চলছে বিএনপির ঢাকা ৪৮ ঘন্টার অবরোধ। কিন্তু সড়কে অবরোধের কোন ছাপ পড়েনি। দূর পাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল। তবে অবরোধের প্রভাব পড়েছে পর্যটনে।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় গেল হরতাল ও অবরোধে পর্যটন খাতে প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের। নতুন করে আবারও অবরোধ শুরু হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের।
শনিবার থেকে কক্সবাজার ত্যাগ করেছে অধিকাংশ পর্যটক। অনেকেই বাতিল করেছে অগ্রিম রুম বুকিং। এতে বিপাকে পড়েছে হোটেল ব্যবসায়ীরা।
আজ রবিবার বেলা ৩টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নিরবতা। খালি পড়ে আছে কিটকট চেয়ারগুলো। অলস সময় পার করছে ফটোগ্রাফার, জেডিস্কি ও ঘোড়া চালকেরা। ক্রেতা নেই চটপটি, ফুসকা ও অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে।
লাবণী পয়েন্টের ফুসকা বিক্রেতা আমান বলেন, ‘সকাল থেকে বসে আছি, বেচাবিক্রি নেই। গুটিকয়েক স্থানীয় মানুষই এখন প্রধান ক্রেতা।’
ঘোড়া চালক শাহীন জানান, ‘মালিককে দৈনিক ১ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু এখব পর্যন্ত দুইশ’ টাকাও রোজগার হয়নি। বেলা শেষে কিভাবে মালিককে টাকা দিব সেই চিন্তায় আছি।’
সী সেইফ লাইফ গার্ডের সদস্য ওসমান বলেন, ‘সৈকতের ১০-১২ পয়েন্টে লাইফ গার্ডের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু পর্যটক না থাকায় দায়িত্ব কমে এসেছে। অনেকেই ফুটবল খেলে সময় পার করছে।’
হোটেল গ্র্যান্ড সেন্ডির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে কক্সবাজার বিমূখ হয় পর্যটকেরা। এতে সবচেয়ে আমরা ক্ষতির শিকার হয়। আমার হোটেলে ৪৮ টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সবকটি বর্তমানে খালি রয়েছে।’
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘এখানকার প্রায় রেস্তোরাঁ পর্যটক ঘিরে জমজমাট থাকে। কিন্তু অবরোধে আবারও পর্যটক খরায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা চাই কক্সবাজার হরতাল-অবরোধ মুক্ত থাকুক। না হয় ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিয়ে বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘কক্সবাজারের পর্যটন খাত অর্থনীতির ভিত মজবুত করে। করোনাকালী অনেক ব্যবসায়ী পথে বসেছে। দুয়েক বছরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু হরতাল ও অবরোধ ঘিরে পর্যটনে ফের অশনি সংকেত বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে সবাইকে ভাবা উচিত। ‘
কক্সবাজারে শ্যামলী পরিবহনের জিএম শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেলায় বাস চলাচলের শিডিউল নেই। যাত্রীরা আসলেও গাড়ি না পেয়ে চলে গেছে। তবে রাতে কয়েকটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে।’
অবরোধ ঘিরে ভোর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি শহরজুড়ে বিজিবি ও র্যাবের একাধিক টিম টহল দিচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের জানমাল রক্ষায় সতর্ক রয়েছে পুলিশ। সড়কে বিশৃঙ্খলা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’