প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়ে বলেছেন, তৃণমূল পর্যন্ত শান্তি বজায় রাখতে হবে। ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, একজন নিরীহ মানুষেরও যেন প্রাণ না যায়। গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে জাতীয় ইমাম সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে আনোয়ারাসহ দেশের ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।
দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলার পাশাপাশি সব পৌরসভায় ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মডেল মসজিদ নির্মাণে ২০১৭ সালে নেওয়া প্রকল্পের অধীনে ৫৬৪টি মডেল মসজিদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বোধন হলো তিনশটি। সম্মেলনে শেখ হাসিনা ইসলাম ধর্মের শান্তির বাণী প্রতিষ্ঠা, তার যুদ্ধবিরোধী অবস্থান, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বাসনার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাস যেন না হয়। তৃণমূল পর্যায়েও যেন শান্তি থাকে, সেটাই চাই। বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আপনাদের দোয়া চাই।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সব সময় বলে আসছি, আমরা শান্তি চাই। অশান্তি বা যুদ্ধ চাই না। প্যালেস্টাইনের উপর যে আক্রমণ, ছোট্ট শিশুদেরকে যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে, আমরা আর তা চাই না। পৃথিবীর সব রাষ্ট্র প্রধানদের আমি অনুরোধ করেছি যুদ্ধ বন্ধের। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের সহায়তা পাঠানোর কথাও তুলে ধরেন তিনি। ইসলাম শান্তির ও সহনশীলতার ধর্ম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদের নবী শিখিয়েছেন। তার বিদায় হজের বাণী আমরা অনুসরণ করি। আমাদের ছেলে–মেয়েরা যেন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকে সম্পৃক্ত না হয়, আপনারা (ইমাম) সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। বাংলাদেশে অন্যান্য ধর্মের লোকও আছে স্মরণ করিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারাও যেন নিজ নিজ ধর্ম যথাযথভাবে পালন করতে পারে। কেউ যদি অন্যায় করে, আল্লাহ বিচার করবেন। ইসলামের কল্যাণে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই হজে হাজিরা যেন কষ্ট না পায়। হজের ইমিগ্রেশন সহজ করতে ব্যবস্থা নিয়েছি। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিয়েছি, ৩৫ হাজার মসজিদে পাঠাগার করে দিয়েছি। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, ইমাম–মুয়াজ্জিনদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। ওলামারা বিপদে পড়লে সহযোগিতা নিতে পারে। যাকাত তহবিল আইন করেছি।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন সৌদি আরবের মসজিদ–ই–নববির ইমাম শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল বুয়াইজান, ত্বরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ কাফিলুদ্দিন সরকার সালেহী, ধর্ম সচিব মু. আ হামিদ জমাদ্দার।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন মাদানী, জাতীয় মসজিদের খতিব রুহুল আমিন, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানসহ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা সারাদেশ থেকে প্রায় এক লাখ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম এ সম্মেলনে যোগ দেন। এদিন জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইমাম ও বিশ্বজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কারও বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।