নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক শেষে ব্রিফিং করে দলের অবস্থান তুলে ধরেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না–এ বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, এসব বিষয়গুলো কথায় কথায় এসেছে, তারা বলেনি, আমি বলেছি যে, বিএনপি নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসব বিষয় বলেছে। তারা বলেছে, সমঝোতার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কম্প্রোমাইজ এবং এডজাস্টমেন্ট সেটারও স্পেস থাকতে হবে। কম্প্রোমাইজ এবং এডজাস্টমেন্টের স্পেসটা বিএনপি ব্লক করে দিয়েছে। ব্লক করে দিয়েছে এইভাবে তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। আমরা প্রতিনিধিদলকে বলেছি, প্রধানমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করবেন? কী কারণ? সংসদে মেজরিটি হারাইছে? না রাস্তায় উপচেপড়া ঢল নেমেছে? শতকরা ৭০ ভাগ দেশের ভোটার শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। খবর বিডিনিউজের।
কাদের বলেন, কথায় কথায় বলেছে, কম্প্রোমাইজের কথা বলতেই পারে। আমরা বলেছি, এর কোনো পথ তারা খোলা রাখেনি। একটা ক্লোজ চ্যাপ্টার, একটা ডেড ইস্যু তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সামনে নিয়ে আসছে, সেটা ছাড়া হবে না। তাদের এক দফা তত্ত্বাবধায়ক, এক দফা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তাদের এক দফা সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশনকেও বাতিল করতে হবে। এইসব দাবির মুখে কী করে কম্প্রোমাইজ হবে? তারা কোনো কিছুর সাথে বিএনপি বা বিরোধীদলের যে দাবিগুলো আমাদের দেশে চলছে, এসব ব্যাপারে একটা কথাও বলেনি।
নির্বাচন কমিশন, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়ক নয় বলে দাবি করেছে বিএনপি, এমন বিষয় নিয়ে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে কাদের বলেন, তারা এখানে কোনো অবস্থাতেই মধ্যস্থতা করতে আসেনি। আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে, এর কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। তেমন কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে আমাদের মনে হয়নি। তারা আসলে আমাদের মনোভাবটা জানতে চেয়েছে, পরিবেশটা জানতে চেয়েছে। আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎটা কিভাবে দেখছি, এসব ব্যাপারে কথা বলেছেন। তাদের কথাবার্তা আমাদের কাছে খুব পজিটিভ মনে হয়েছে। তারা কোনো পক্ষ বা বায়াসড এটিচিউড নিয়ে কথা বলেছেন এমন নয়। আমাদের দেশে এই প্রতিনিধিদল কোনো পক্ষ নিয়ে কথা বলেনি। এখানে তারা পরিস্থিতিটা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায়, এটাই আমরা বুঝেছি। বাস্তব অবস্থা, ভায়োলেন্সের কোনো আশঙ্কা আছে কিনা এসব তারা পর্যবেক্ষণ করছে।
কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। তাদের সঙ্গে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে ৮২টি সংস্কার শেখ হাসিনার সরকার করেছে সে ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে অঙ্গীকার জাতির কাছে করেছেন, সে বিষয়ে আমরা আইআরআই ও এনডিআর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেছি। বিএনপি যে সকল অভিযোগ তাদের কাছে করেছে তার জবাব আমরা তাদের জানিয়েছি। আমরা জানি যে, সভা–সমাবেশে যেভাবে তথ্য পরিবেশন করে, আইনের ভুল ব্যাখা, সে ব্যাপারে আমাদের সঠিকতার বিষয়টি আমরা তাদের বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা কারও বিষয়ে কিছু বলতে চাইনি। দেশে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে সব অভিযোগ যেহেতু আমাদের দিকে, তখন আমাদের জবাব দিতে হবে। প্রতিনিধিদল অবশ্য বলেছে, তারা কোনো বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে আসেনি। তারা এখানে একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চায়। আমরাও বলেছি, আমরা একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।