পাথর সরে যাওয়ায় রেললাইন দেবে গেছে, বেঁকে যায়নি

সাতকানিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইন পরিদর্শন শেষে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৮:০৪ অপরাহ্ণ

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেছেন, “দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে রেল চলাচল শুরু হবে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে স্বপ্নের এ রেললাইনের উদ্বোধন হবে। এটি পুরো দেশের মানুষের কাছে স্বপ্নের প্রকল্প। বন্যায় ক্ষতি হওয়া রেললাইনের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না কারণ বন্যায় রেললাইনের তেমন ক্ষতি হয়নি। রেললাইনের মাত্র ৫০০ মিটার এলাকার মধ্যে কিছু কিছু অংশ ক্ষতি হয়েছে। পানির কারণে স্লিপারের নিচ থেকে পাথর সরে গেছে। কয়েক জায়গায় সামান্য কিছুটা দেবে গেছে। মূল লাইনের কোনো ক্ষতি হয়নি।”

তিনি আজ শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সকালে সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতি হওয়া রেললাইন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, “ছবি দেখে মনে করেছিলাম রেললাইন বেঁকে গেছে। এজন্য সরেজমিন দেখতে এসেছি। এখন দেখলাম কোথাও রেললাইন বেঁকে যায়নি। বন্যার পানিতে পাথর সরে যাওয়ায় লাইন কোথাও ঝুলছে আবার কোথাও সামান্য দেবে গেছে। মূল রেললাইনের কোথাও বেঁকে গেছে বলে আমার মনে হয়নি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। কাছে গেলে বুঝা যাচ্ছে আসলে বাঁকা হয়নি। টেকনিক্যাল টিম হয়তো আরো ভালো বলতে পারবে ঠিক কী কারণে এরকম হয়েছে। যদি সত্যি লোহা বেঁকে থাকে তাহলে সেগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।”

ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনের সংস্কার কাজ কখন শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা পরিদর্শন করে যাচ্ছি। টেকনিক্যাল টিম এটা নিয়ে কাজ করছে। আমরা তাদেরকে নিয়ে বসব। কারিগরি দিক থেকে এর সমাধান কী তা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। টেকনিক্যাল টিমের সাথে বসলে জানতে পারব প্রকৃত কারণ এবং সমাধানের পথ কী। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে।”

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর

রেললাইনে ব্রিজ-কালভার্ট কম হওয়ায় বন্যার পানি বেশি হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা নিশ্চিত করতে চান যে কোনো কিছুর জন্য জনগণের যেন ভোগান্তি না হয়। রেলওয়ে যখন কোনো প্রকল্প হাতে নেয় তখন সেখানকার বিগত ১০০ বছরের নদীর গতিপথ, জোয়ার-ভাটা, জীববৈচিত্র্যের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। এ রেললাইন প্রকল্পে যা ছিল তার চেয়ে ৪০টি ব্রিজ কালভার্ট বেশি করা হয়েছে। জনগণের দাবি এবং কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি যে এখানে কালভার্ট ব্রিজ বাড়ালে ভালো হবে তখন সেখানে বাড়িয়ে দিয়েছি। আজ এখানে আসার পর আমরা আলোচনা করছি যে তেমুহনী এলাকায় আরো কয়েকটি ব্রিজ কালভার্ট করে দিব ভবিষ্যতে যাতে বন্যার পানি নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়।”

পরিকল্পনায় কোনো ত্রুটি বা কাজে গাফিলতি আছে কি না জানতে চাইলে ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, “স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এখানে অতীতে এরকম বন্যা আর হয়নি। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে কখন, কোথায়, কী হচ্ছে তা বুঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বিগত ১০০ বছরের মধ্যে যে পরিমাণ পানি হয়নি সেখানে এ বছর তা হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে এবার সবচেয়ে বেশি পানি হয়েছে। আগামীতে আরো বেশিও হতে পারে। এজন্য আমরা তলিয়ে যাওয়া এলাকায় আরো কিছু ব্রিজ-কালভার্ট করে দিব কারণ রেললাইন প্রকল্পটি আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা করে করা হয়েছে।”

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে অনেক কিছুই অস্বাভাবিক হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রযুক্তিগতভাবে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিছুদিন আগে সেখানে টানেলের মধ্যে পানিতে ডুবে লোক মারা গেছে। ওরাতো এমন ডিজাইন করেনি যে বৃষ্টি হলে টানেলের মধ্যে পানি আসবে।”

এজন্য আগামী ১০০ বছরের কথা মাথায় রেখে ব্রিজ-কালভার্ট দেয়া হবে। প্রয়োজন হলে পাথর দিয়ে রেললাইন উঁচুও করা যাবে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শনকালে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান, ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান ভুইয়া, রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ডেপুটি ডিরেক্টর সৌরভ বাবু ও প্রকল্পের টিম লিডার ইস্টিবেন প্রেগনাল উপস্থিত ছিলেন।

বন্যায় ক্ষতি হওয়া অংশ সংস্কার ও নতুনভাবে ব্রিজ-কালভার্ট করলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে কি না জানতে চাইলে রেলপথ সচিব বলেন, “এতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না।”

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান ভুইয়া বলেন, “বন্যার কারণে ১০ দিন কাজ করতে পারিনি। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এলাকায় স্রোতে কিছু পাথর ভেসে গেছে। কিছু কিছু অংশ সামান্য দেবে গেছে। তবে টেকনিক্যাল টিম সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার করে দেয়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য কাজও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করে দেয়া যাবে।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষণ, সাঙ্গু, ডলুনদী ও হাঙ্গর খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার উপর দিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বয়ে গেছে। উক্ত বন্যায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়ায় কেঁওচিয়ার তেমুহনী অংশ বন্যার পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে রেললাইনের পাথর, কংকর ও মাটি সরে গেছে। কোথাও কোথাও লাইন দেবে যায়। আবার কোথাও পাথর, মাটি সরে যাওয়ায় রেললাইন শূন্যে ভাসছে।

এদিকে, স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ, রেললাইনের তেমুহনী এলাকায় ব্রিজ কালভার্ট কম হওয়ায় এবারের বন্যায় রেকর্ড পরিমান পানি হয়েছে। এলাকার প্রত্যেকটি বসত ঘর বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রেললাইনের তেমুহনী এলাকায় ব্রিজ কালভার্ট না বাড়ালে আগামীতেও এমন পরিস্থিতিতে পড়বে হবে।

তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জনদূর্ভোগ কমাতে তেমুহনী এলাকায় কালভার্ট ব্রিজ বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমায়ের মেজবান না করে অর্থোপেডিক পুনর্বাসন সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন সালাম : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি এখন সুবোধ বালক: তথ্যমন্ত্রী