এক বছরে সাড়ে ৩ হাজার ট্রেড লাইসেন্স বেড়েছে

সাড়ে ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় চসিকের

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ৪ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

সদ্য বিদায়ী ২০২২২০২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ৮৪ হাজার ৮৭টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে। যা আগের অর্থবছরে (২০২১২০২২) ছিল ৮০ হাজার ৩৪২টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৩ হাজার ৭৪৫টি বেশি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে সংস্থাটি। অবশ্য সংখ্যা বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লক্ষ ১৭ হাজার ৯৩৬টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা। ওই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার ৭৪ শতাংশ পূরণ হয়েছে। ২০২১২০২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৭২ শতাংশ পূরণ হয়।

চসিকের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্স এর বিপরীতে ২৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৯ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৩ কোটি ৪ লাখ ৭০ হাজার ২২৩ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৬ টাকা বেশি আদায় হয়েছে।

বিদায়ী অর্থ বছরে ট্রেড লাইসেন্স এবং এ খাতে ফি আদায় বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, লাইসেন্স বিভাগের কর্মকর্তাকর্মচারীদের তৎপরতা ছিল। পাশাপাশি আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট করেছেন। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু বর্তমানে নতুন ট্রেড লাইসেন্স ম্যানুয়ালি দিচ্ছি না। ইট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি। চেষ্টা করছি নবায়নও শতভাগ অনলাইনে করতে।

চসিকের প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে চট্টগ্রামে বিজনেস অ্যাক্টিভিটিস বেড়েছে। আবার আমরা ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু শতভাগ অটোমেশন করছি। নিয়মিত মনিটরিং ছিল। এসব কারণে এবার ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়তে পারে। আশা করছি ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।

জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্স এর মধ্যে নতুন ট্রেড লাইসেন্স হচ্ছে ১৬ হাজার ১২৩টি। বাকি ৬৭ হাজার ৯৪৬টি নবায়ন করা হয়েছে। এর আগে ২০২১২০২২ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৬৭৫টি নতুন এবং ৬৫ হাজার ৬৬৭টি ট্রেড লাইসেন্স নতুন ইস্যু করা হয়েছিল। এর আগে ২০২০২০২১ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৪২টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫৪৮টি নতুন এবং এবং ৬৪ হাজার ৪৯৪ টি নবায়ন করা হয়। ২০১৯২০২০ অর্থবছরে ৭২ হাজার ৫০৮টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৪৫ টি নতুন এবং ৬০ হাজার ৫৪টি নবায়ন করা হয়েছিল। ২০১৮২০১৯ অর্থবছরে নতুন ও নবায়নসহ ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়েছিল ৮০ হাজার ৫১ টি।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর অধীনে প্রণীত আদর্শ কর তফসিল২০১৬ অনুযায়ী, চট্টগ্রামহ দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলো তার অধিক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে। আবার নগরে যে কোনো বৈধ ব্যবসার জন্য চসিক থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। প্রতি অর্থবছর এসব লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ৫০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা আছে আইনে।

আবার অর্থ আইন ২০০৭ দ্বারা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪এর ৫২ () সংশোধন করে সিটি কর্পোরেশনকে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সময় প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আরও ৫০০ টাকা উৎসে কর বাবদ এনবিআরের অনুকূলে আদায় করা হত। অর্থ আইন ২০১৯এর ২৭ ধারায় সেই উৎসে কর বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। ফলে ২০১৯২০২০ অর্থবছর থেকে ট্রেড লাইসেন্স ফি’র সাথে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে নগরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। সাথে লাইসেন্স ফি এর বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। ফলে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকায় কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স করলে তাকে আরো তিন হাজার ৭৫ টাকা আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। অতিরিক্ত টাকা পরিশোধের ভয়ে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স করতে চান না। ফলে পূরণ হচ্ছে না চসিকের লক্ষ্যমাত্রাও।

সর্বোচ্চ আদায় সার্কেল১ এ :

আটটি রাজস্ব সার্কেলের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে চসিক। এর মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ শতাংশ পূরণ করে প্রথম হয়েছে রাজস্ব সার্কেল১। এ সার্কেল থেকে ৮ হাজার ৪৩৮টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ইস্যু হয় এক হাজার ৫২৬টি এবং এবং নবায়ন হয়েছে ৬ হাজার ৯১২ টি। এতে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সার্কেল৩ ও ৬ যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে। সার্কেল দুটির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৮১ শতাংশ। এছাড়া সার্কেল২ এর ৭১ শতাংশ, সার্কেল৪ এর ৭৭ শতাংশ, সার্কেল৫ এর ৭৫ শতাংশ, সার্কেল৭ এর ৬৩ শতাংশ এবং সার্কেল৮ এর লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্তিনেসের উপহার জার্সি, প্রধানমন্ত্রী দিলেন নৌকা
পরবর্তী নিবন্ধভূজপুরে আ. লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ গাড়ি ভাঙচুর, আহত ৩০