চট্টগ্রামে চাঙা হচ্ছে ১৪ দলীয় জোট

দীর্ঘ ৫ বছর পর জোটের নিষ্ক্রিয় শরিকদের সক্রিয় করার উদ্যোগ

শুকলাল দাশ | শুক্রবার , ২৬ মে, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার চাঙা হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলীয় জোট। একই ভাবে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ যুতবদ্ধ আন্দোলনসভাসমাবেশের মাধ্যমে সক্রিয় করে তুলেছিল। নির্বাচনের পর থেকে দীর্ঘ ৫ বছর চট্টগ্রামে ১৪ দলীয় জোটের কোনও মিটিংসভাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি।

সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর চট্টগ্রাম ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়কের পদটি এতদিন খালি ছিল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট আগে ভাগেই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। একইভাবে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলীয় শরীক দলগুলোকেও সক্রিয় করা জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এই লক্ষ্যে গত ২১ মে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পেয়েই তিনি ইতোমধ্যে ১৪ দলীয় জোটের প্রতিটি শরীক দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলেছেন। ১৪ দলের শরীক দলগুলোকে সক্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। আজ ২৬ মে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের এক সভা বিকাল ৪টায় দারুল ফজল মার্কেটস্থ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরীক দলের নেতৃবৃন্দকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরই ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দলীয় জোট মিলে এই জোট গঠিত হয়। ১১ দলে আছে সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাহবুব), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল।

কিন্তু জোট গঠনের পরপরই ১১ দল থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)সহ কয়েকটি দল বেরিয়ে যায়। ওই সময়ে জোটটি ১৪ দল নামেই বিএনপিজামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। পরে ২০০৭ সালের একএগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় জোটের শরিক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে ১৪ দল ছেড়ে না গেলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ কয়েকটি দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার প্রায় ১৪ বছরে আর কোনো দল আওয়ামী লীগের জোট ছেড়ে যায়নি। বরং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরিকত ফেডারেশন জোটে যোগ দেয়।

সমপ্রতি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নিজেদের জোট সমপ্রসারণের কাজ শুরু করেছে। এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের অন্তত ৭টি দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েই চলছে। গত কয়েক বছরে জাতীয় কোনো ইস্যুতে ১৪ দলের জোটগত কোনো অবস্থান দেখা যায়নি।

জোটের শরিক কয়েকটি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা আজাদীকে বলেন, জোট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার পেছনে আওয়ামী লীগের অনাগ্রহ মূলত দায়ী। এ অনাগ্রহের পেছনে প্রধান তিনটি কারণ রয়েছে। এগুলো হলোপরপর দুই মেয়াদে সরকার গঠনের পর জোটের শীর্ষ নেতাদের মন্ত্রী সভায় রাখা হলেও তৃতীয় বার (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) জোটের কোনো নেতা সরকারের মন্ত্রী সভায় স্থান পাননি। এই নিয়ে জোটের ছোট ছোট দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বাড়তে থাকে, অপরদিকে ভোটের রাজনীতির সমীকরণ ও সরকারের প্রশাসন নির্ভরতা। ভোট বাড়ানোর চেষ্টায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের বাম ও প্রগতিশীল দলগুলোর বিরোধ রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভাবিকে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক মেয়র সরওয়ার কামালের মনোনয়ন প্রত্যাহার