বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। প্রায় দুইবছরের করোনা–দুর্যোগ, রাশিয়া– ইউক্রেন যুদ্ধ দেশে দেশে যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে; জীবন অধ্যায়ে ক্ষয়ের নানামুখী রেখা যেভাবে ক্রমাগত মোটা করে চলেছে, এর ভবিষ্যৎ ফল আরও কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তাতে শঙ্কিত। আমরাও এই পরিস্থিতির বাইরে নই। করোনা মহামারি চরম মর্মন্তুদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। জীবন–জীবিকা এক প্রকার থমকে গিয়েছিল। প্রতিনিয়ত ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় পরিলক্ষিত করেছি। জবাবদিহিতা–দায়বদ্ধতার যে অভাব তার অনেক নজির হয়তো দেখা যাবে। সংকটকালীন সময়েও ঋণখেলাপীরা সুযোগ খুঁজে নিচ্ছেন। বড় বড় দুর্নীতির পেছনে অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত। যারা নিজেদের পকেট ভারী করতে হাজার হাজার কোটি বিদেশে পাচার করেন। তাদের অনেকে সিন্ডিকেট করে পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে। আমরা যারা সাধারণ ভোক্তা আছি তারাই এর ফল ভোগ করে থাকি।
২০১৯ সালে আমি যে বেতন পেতাম ২০২৩ সালে এসে আমার বেতনের সাথে ৩০০০ টাকা যোগ হয়েছে। বেতন দ্বিগুণ হয়নি অথচ দ্রব্যমূল্য দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দোকানে যখন বাজার করতে যাই অথবা চারদিকে থাকিয়ে দেখি তখন অর্থ কষ্টের যে যন্ত্রণা সেটা উপলব্ধি হয়। ব্যয়ের সাথে আয়ের সংগতি হচ্ছেনা। যারা পণ্য উৎপাদন করেন তাঁরা কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে। ইন্দোনেশিয়া পামঅয়েল রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। আর তখন থেকেই বাজারে পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয় মিল মালিকরা। বিভিন্ন বাজারে এক–দুই লিটারের বোতল ও খোলা সয়াবিন পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছিল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দরে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু মজুদদার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা দেখেছি কি পরিমাণ তেল মজুদ করা হয়েছিল।
যাই হোক সবকিছুর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থাকবে। ভালোর সাথে মন্দ আর মন্দের সাথে ভালো মেশানো থাকবে। আমরা যারা সাধারণ ভোক্তা আছি তারা অবশ্যই মিতব্যয়ী হব কারণ বিকল্প কোনো পথ আমি আপাতত দেখছিনা। ঈদের দুইদিন আগে মাছের বাজারে গিয়েছিলাম মাছ কেনার জন্য। যে মাছ কেজি ২৫০ টাকা দিয়ে কিনতাম সে মাছ কিনলাম ৪০০ টাকা দিয়ে। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতার সরাসরি জবাব তেলের দাম বেড়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বেশি তাই আমাদের মাছেরও দাম বেশি। আমি সরকারকে অনুরোধ জানাব প্রত্যেক পরিবারের জন্য রেশন কার্ড চালু করুন। আশা করছি রেশন কার্ড চালু হলে মজুদদারের যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে।
মিতব্যয়ী অভ্যাসটা গড়ে তুলতে হবে নিজের মধ্যে। শুধু নিজের মধ্যে নয় পরিবারের সবার মধ্যেও এ অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো বাদ দিতে হবে। প্রয়োজন আর অপ্রয়োজনের পার্থক্যটা পরিবারের সবাইকে বুঝাতে হবে। যেমন– বন্ধুদের সাথে আড্ডা একদিন দেওয়া যায়, প্রতিদিন নয়। বাজারে যাওয়ার সময় তালিকা তৈরি করে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে দেখব উল্টোপাল্টা কেনাকাটা কম হবে। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু কিনে আনব। প্রয়োজনে সামনের মাসে আবার কিনব। আর যদি বেশি কিনলে সস্তা পাওয়া যায় তাহলে সামনের মাসের জন্য সেটা আলাদা করে তুলে রাখার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে বেশি থাকলেই বেশি খরচ হবে। অফিসে যাওয়ার সময় বা বাইরে কোথাও বের হলে হাতে একটু সময় নিয়ে বের হব। না হলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রিক্সা বা সিএনজি নিতে হবে। কাছে কোথাও গেলে হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। অমিতব্যয়ী ব্যক্তির অপরিণামদর্শিতার কারণে জীবনের সূচনালগ্নে সচ্ছল ছিলেন এরূপ ব্যক্তিকে মাঝ বয়সে বা বার্ধক্যে উপনীত হলে অর্থসঙ্কটে দুঃখ–দুর্দশায় নিপতিত হতে দেখা যায়। তাই প্রত্যেক পরিবারে মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা রাখতে হবে।