মাহে রমজানের শেষ জুমার দিন– পবিত্র জুমাতুল বিদা আজ। মসজিদে মসজিদে রোজাদার মুসল্লিদের সরব উপস্থিতি ঘটবে সারা দেশে। শেষ মুহূর্তে রোজাদারদের বড় জমায়েত এ জুমাতুল বিদায় মসজিদের খতিবের মুখে বার বার ধ্বনিত হবে আল বিদা মাহে রমজান, আল বিদা মাহে রমজান।
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানের বিদায়ে খতিব সাহেবানের মুখে মুখে করুণ সুরে বেজে উঠবে। তখন গভীর শূন্যতা ও বেদনায় আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠবে আল্লাহ্র প্রিয় বান্দারা। মাহে রমজান যাদের জীবনে রহমত ও কল্যাণের পরশ নিয়ে এসেছিল তা বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে বেদনা, শূন্যতা ও হাহাকার ধ্বনি তো থাকবেই। রোজাদার মাত্রই আজ দলে দলে শামিল হবে জুমাতুল বিদায়।
একটি বছরের জন্য মাহে রমজানের বিদায়ে ঈমানদার জনতা কোনোভাবেই সান্তনা খুঁজে পায় না। আল্লাহ্র করুণা, ক্ষমা ও মুক্তির সওগাত নিয়ে আসা রমজানের দিনগুলো ফুরিয়ে যাওয়া তাদের কাছে বিষাদতুল্য, অপ্রত্যাশিত মনে হয়। সিয়াম সাধনা ইবাদত রিয়াজত বন্দেগি, দান সদকাহ, যাকাত ফিতরা আদায় ও গরিব দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অশেষ পুণ্যের আবাহনে আসা মাহে রমজানের বিদায়ে ঈমানদার জনতার অস্তিত্ব জুড়ে আজ রক্তক্ষরণ ঘটছে।
মন যে প্রবোধ মানে না। বিদায় বেলায় তারা গভীর মমতায় মাহে রমজানের অতিথিকে অস্ফুট স্বরে বলে– আবারো ফিরে এসো আমায় ধন্য করতে– হে মাহে রমজান! আজ জুমাতুল বিদার দিনে মুসল্লিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জুমার নামাজ শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলাবে, মুসাফাহ–মুয়ানাকা করবে, করমর্দন ও কোলাকুলি করবে, বিগত দিনের সমস্ত বেদনা ও রেষারেষি ভুলে তারা পরম আনন্দে জান্নাতি খুশির আমেজে সমপ্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের আলোয় ঝলসে ওঠবে– এভাবে জয় হবে মানবতার। মানুষে মানুষে মিলনের মধ্য দিয়ে ভেদবুদ্ধি লুপ্ত হবে এবং বিনাশ ঘটবে অশুভ সামপ্রদায়িকতার।
সারা বিশ্বে চলছে আজ মুসলমানদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন। মানবতার শত্রুরা শান্তিকামী জনতার শান্তি ও স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। সন্ত্রাস ও জুলুমের থাবা মুসলিম জনপদ ছাড়াও দেশে দেশে আজ বিস্তৃত। অনেক দেশে বাজছে যুদ্ধ–সংঘাতের দামামা। আত্মকলহ ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে ঈমানী চেতনা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে অহিংস পন্থায়। রাষ্ট্রীয় সংহতি ও বিশ্ব সমাজ গড়তে হবে মাহে রমজানের চেতনায়। জুমাতুল বিদার দিনে মুসলিম জনতার ঈমানী চেতনা শাণিত হবে এবং নবোদ্যামে নতুন শপথে তারা জেগে উঠবেই– এই আশাবাদ সবার। আমাদের দেশ আজ কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে সামনে এগুচ্ছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেও শকুনেরা ওঁৎ পেতে আছে দেশ ও মানুষের শান্তি হরণের কুমতলবে। আজ জুমাতুল বিদায় খতিবের খুতবায় (ভাষণে) সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগিয়ে তোলার বুদ্ধিদীপ্ত ঈমানি দায়িত্বই পালন করবেন মসজিদের ইমাম–খতিবেরা। সত্য, সুন্দর ও ইনসাফের পক্ষে তাঁদের হতে হবে বজ্রকণ্ঠ। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও মসজিদের ইমাম, খতিব, আলেম উলামাদেরকে বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক মর্মবাণী তুলে ধরার এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, হানাহানি ও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানিয়েছেন। নৈরাজ্য, সংঘাত–হানাহানি, সুদ–ঘুষ–দুর্নীতি অনাচার, নারী শিশু নিপীড়ন, শোষণ বঞ্চনা, দারিদ্র্য–ক্ষুধাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদের রক্ষা করেন–আজ জুমাতুল বিদার দিনে আমাদের এই ফরিয়াদ জানাতে হবে। আজ জুমা শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে গরিব দুখী অভাবী মানুষের মাঝে দান সদকাহর হাত বাড়িয়ে দেবেন। এতেই মিলবে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি।