করোনার চতুর্থ ডোজের টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। সারাদেশের মতো গতকাল চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা এবং নগরীর স্থায়ী টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ষাটোর্ধ এবং সম্মুখযোদ্ধাদের টিকা প্রদান করা হয়েছে। এদিক গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে প্রথম ৪র্থ ডোজ টিকা গ্রহণ করে কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নগরীতে কোন মানুষই টিকার বাইরে থাকবে না। চলমান কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভ্যাকসিনের অপ্রতুল সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বের বহু দেশের আগে আমাদের দেশের জনসাধারণকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে এসেছেন। যা আমাদের জন্য বড় অর্জন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ৪র্থ ডোজ গ্রহণকারীদের ফাইজারের টিকা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি। সঠিক সময়ে টিকা দেয়ার ফলে মানুষ এখন নিরাপদ আছে। নগরীর প্রতিটি মানুষকে প্রাপ্ত টিকা দেয়া হবে। নগরীতে কেউ টিকা বাইরে থাকবে না। আর এটা করা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
মেয়র আরো বলেন, অন্যান্য ডোজের মতো ৪র্থ ডোজ আপাতত: গণহারে দেওয়া হবে না। প্রথম দফায় ৫ শ্রেণীর মানুষ যেমন ষাটের উর্ধ্বে ব্যক্তি, সম্মুখ সারির যোদ্ধা, কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের টিকা প্রদান করা হবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিকের প্রধান স্ব্যাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। এ সময় স্বাস্থ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, সংরিক্ষত কাউন্সিলর নিলু নাগ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, চসিক জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. তপন কুমার চক্রবতী, ডা. আকিল মাহমুদ নাফে, ডা. মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নগরীর ১১টি পয়েন্ট চসিক পরিচালিত জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, ছাপা মোতালেক হাসপাতাল, বন্দর টিলা হাসপাতাল, সিএম এইচ, বন্দর হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, কাট্টলী মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে দুপুর ২ টা পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চলবে। মেয়র জানান, নগরীতে ১ম ডোজ টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৩২ লাখ, ২য় ডোজ ২৮ লাখ, ৩য় ডোজ ১৮ লাখ, এবং ৪র্থ ডোজ প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকবে। তিনি বলেন, চসিকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা মওজুদ আছে। নগরবাসীকে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা পেতে মাস্ক পরিধান, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
নগরীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চতুর্থ ডোজের টিকা প্রদান কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনার চতুর্থ ডোজ দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। যাদের তৃতীয় ডোজ টিকা দেয়ার চার মাস অতিক্রান্ত হয়েছে ক্রমান্বয়ে তাদের সবাইকে চতুর্থ ডোজ টিকার আওতায় আনা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। চতুর্থ ডোজে ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে যেখানে ফাইজার থাকবে না সেখানে সিনোব্যাকের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে দেয়া টিকা কার্ড সাথে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, হাসপাতালে সাধারণত প্রতিদিন আমাদের টিকা কার্যক্রম চলছে। যেহেতু চতুর্থ ডোজ চালু হচ্ছে, তাই আমরা একটি কক্ষ নির্ধারণ করে রেখেছি। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামে করোনার বুস্টার ডোজের কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে তৃতীয় ডোজ টিকা পাওয়া প্রথম দিকের ব্যক্তিদের প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে।