সোনা দাদুর উপহার

মোঃ আব্দুর রহমান | বুধবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

আজ রিপনের জন্মদিন। বাসার সবাই কেক কাটার আনন্দে মাতবে আর মাত্র একটু পরেই। এদিকে মোটেই তর সইছেনা রিপনের বন্ধুদের। কখন মোমবাতি নিভাবে, হাতে তালি দিবে, কেক খাওয়াবে-খাবে আরও কত চিন্তাধারা মাথায় শুধু ঘুরছে আর ঘুরছে! আর পরেতো কোরমা-পোলাও থাকছেই। বাসায় রিপনের স্কুলের স্যার-ম্যাম, মামা বাড়ীর সকল আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। সাথে পাড়া-প্রতিবেশীরাতো আছেই। কারণ বাবা-মায়ের এক সন্তান বলে কথা।

রিপনের বাবা সবুর সাহেবের অনেক বড় ব্যবসা। গাড়ী, বাড়ী, টাকা-পয়সা কোন কিছুর কমতি নেই। মনটাও অনেক বড়। তাই ছেলের জন্মদিনে কোন আয়োজনের কমতি রাখলেন না। ব্যানার, ফেষ্টুন এবং সাউন্ড সিস্টেমের জাঁকজমক গানে আনন্দের জোয়ার বইছে ঘরে! সকলেই আসার সময় হাতে করে এনেছে হরেক রকম উপহার। কেউ খেলনা, কেউ টি শার্ট, মামা দিলো সাইকেল, বাবা দিলো ল্যাপটপ, চাচ্চু দিলো ঘড়ি, ফুপু দিলো ট্যাব ইত্যাদি ইত্যাদি।

অবশেষে জমজমাট পরিবেশে সবাই কেক কাটার জন্য প্রস্তুত। রিপনের পাশে, ডানে, বামে এবং সামনে একে একে সবাই দাঁড়ালেন। কিন্তু, নেই শুধু একজন মানুষ। সে হলো রিপনের দাদু!যে রিপনকে সোনাভাই বলে ডাকে। আর রিপন বলে সোনা দাদু। যাঁর সঙ্গে অবসরে হাসে, দাবা খেলে এবং রাজা-রানীদের গল্প শুনতে শুনতে কোলেও ঘুমিয়ে পড়ে। সেই সোনা দাদুকে ছাড়া রিপনতো কেক কাটতেই পারে না। তাই আমি আসছি বলে এক দৌড়ে হাওয়া হলো রিপন। এদিকে সবাইতো অবাক! মোমবাতি জ্বলছে, সবাই অপেক্ষা করছে, আর ও কোথায় চলছে! রিপন রিপন করে ডাক শুরু করলো ওর মা..।

কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরলো রিপন। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো এই ছোট্ট ছেলের কান্ড দেখে! হুইল চেয়ারে ঠেলে নিয়ে আসলো ওর সোনা দাদুকে। সবার উদ্দেশ্য রিপন বললো,” আমাকে সবাই মাফ করবেন, আমার দাদু এখানে আসতে চাইছিলনা এবং আসতে পারছিলওনা। কারণ আমার দাদুর পা নেই! তবে আমি গর্বিত, কারণ আমার দাদু একজন মুক্তিযোদ্ধা। সোনা দাদু আমায় তুমি আজ কিছু উপহার দেবেনা।” আনন্দে চোখের পানি ছেড়ে দিলো ওর দাদু।

মুখে বললো,”অবশ্যই দেবো। এই বিজয়ের মাসে আজ তোমাকে আমি একটি ছোট্ট উপহার দেবো সোনা ভাই আমার।” পকেট থেকে একটি ছোট্ট লাল সবুজের পতাকা বের করে রিপনের মাথায় পেঁচিয়ে দিয়ে, চুমু খেতে থাকলো কপালে। এদিকে ঘরের সবাই আনন্দে করতালি দিতে লাগলো। আর রিপন বললো, “আজকের দিনে আমাকে সেরা উপহারটা তুমিই দিলে দাদু।” এরপর সোনা দাদুকে সঙ্গে নিয়েই কেক কাটলো রিপন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজস্থলীতে হরতালের প্রথম দিন শান্তিপূর্ণ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনার চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু