অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানতাপস। রাষ্ট্র, অর্থনীতি, ইতিহাস, রাজনীতি, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে ছিল তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য। আজীবন ব্যাপৃত ছিলেন জ্ঞান অন্বেষায়, জ্ঞান সাধনায়। আর তা অনুরাগীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেও ছিলেন সদা সচেষ্ট। আবদুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯১৪ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পাড়াগ্রামে। ঢাকার মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৩১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৩৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে পিএইচডি করার জন্যে লন্ডন গমন করেন; তবে লাস্কি পরলোকগমন করায় তার থিসিস মূল্যায়ন করার মতো কেউ নেই এই বিবেচনায় তিনি থিসিস জমা না-দিয়েই (অর্থাৎ কোনো ডিগ্রি ছাড়াই) দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে এসি তিনি ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলাদা বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে আবদুর রাজ্জাক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হন। শিক্ষক হিসেবেই পেশাগত জীবন থেকে অবসর নেন তিনি। তাঁর জ্ঞানের পরিধি ছিল অত্যন্ত গভীর ও বিস্তৃত। জ্ঞান অন্বেষণের জন্য অনেকেই তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী তাঁর অনুগামী ছিলেন। এদের দৃষ্টিতে আবদুর রাজ্জাক ছিলেন ‘শিক্ষকের শিক্ষক’। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক অল্প কিছু প্রবন্ধ ছাড়া কিছুই রচনা না করলেও তার অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে কিংবদন্তির খ্যাতি অর্জন করেন। আহমদ ছফা তাকে নিয়ে যদ্যপি আমার গুরু নামে একটি বই রচনা করেছেন। এছাড়া সরদার ফজলুল করিম তার সাথে আলাপচারিতার ওপর ভিত্তি করে একটি বই লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজঃ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা। তবে অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান বিতরণে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে তাঁকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হিসেবে সম্মানিত করে। ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।