আজ ১৫ অক্টোবর। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশও দিবসটি পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ১৮-এর নিচে বিয়ে নয়, আইন করে বাল্যবিয়ের স্বীকৃতি বন্ধ হোক’। দিবসটি পালনে দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সংস্থা নিজেদের অর্থায়নে ৬০ জেলা এবং ১১ উপজেলায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
দেশের অন্য সব অঞ্চলের মতো ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে মীরসরাইয়ের গ্রামীণ নারীরা। ঘরে বসে কেউ তৈরি করছেন বিভিন্ন সামগ্রী। কেউবা লালন-পালন করছে হাঁস-মুরগী। অনেকে আবার বাড়ির আঙিনায় রোপণ করছে নানান ফলের চারা ও শাক-সবজি। এসব থেকে এক পর্যায়ে ভালো আয়ও হয়। সেই আয় দিয়ে সংসারের মাসিক খরচের একটা অংশ মিটাতে পারে। সহযোগিতা করতে পারে স্বামী-সন্তানদের।
সুরজাহান বেগমের (৪০) স্বামী জাফর আলম সিএনজিচালক। স্বামীর আয়ে ৪ সন্তানের পড়ালেখাসহ সকল খরচ সামাল দেয়া কষ্টকর। তাই সুরজাহান সংসারের কাজের পাশাপাশি বুনেন পাটি। একটি পাটি তৈরি করতে লাগে ২ দিন। সেই পাটি হাটে বিক্রি করে টাকা এনে দেন স্বামী জাফর। একটি পাটি নূন্যতম ৬০০ টাকা বিক্রি হলে লাভ থাকে ৪০০ টাকা। এতে দৈনিক গড় আয় ২০০ টাকা। এই আয় থেকে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচসহ অনেক খরচ নিজেই করেন সুরজাহান।
একই বাড়িতে তারই ননদ মাসুদা আক্তার (২৫) জানান, তিনিও কৃষক বাবা শহিদুল হকের সংসারে পাটি বুনে দৈনিক ২০০ টাকা দিতে পারেন। এতে মাসুদাও খুশি বাবা-মাও খুশি। একইভাবে বাড়ির প্রবীণ দাদি আলেয়া বেগম (৬৫) বলেন, আমিও বাড়ির বউ-ঝিদের সাথে প্রায়ই পাটি বানাই। বয়স হয়েছে বলে আমার একটা পাটিতে ৪-৫ দিন লেগে যায়। তবুও আমার ঔষধ এবং নিজের অন্যান্য খরচের টাকা এতে জোগাড় হয়ে যায়। এছাড়া বাড়ির ফরিদা বেগম (৪৫), রোকেয়া বেগম (৪৬), মোমেনা খাতুন (৪০), ফেরদৌস আরা (৪৪), বিবি আয়েশাসহ (৩৮) সকলেই নিজ নিজ সংসারে পাটি বুননের টাকা দিয়েই সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে। বেতের পাটির পাশাপাশি পাটি পাতা দিয়ে নামাজের বিছানা, ফুলের বটনি ও বানায় ওরা।
একসময় শীতল পাটি বুনতো অনেকে। কিন্তু শীতল পাটিতে এখন সময় বেশি দিতে হয়, উপযুক্ত দামও পাওয়া যায় না। তাই বেতের পাটিই বানাচ্ছে সবাই। পুরুষরা তাদের পাটিপাতা, বেত আর বাঁশের কঞ্চি হাট থেকে এনে দেয়। আবার বিক্রিও করে দেয়। মিঠাছরা হাটেই এসব পাটি তারা বিক্রি করে প্রতি হাটবার রবি ও বৃহস্পতিবার ভোরে। বাড়ির শাশুড়ি বৃদ্ধা আলেয়া বেগম থেকে শুরু করে বউ সুরজাহান ও ঝি মাসুদা; কেউ কাউকে পাটি বুননে হিংসে করে না। বরং প্রতিযোগিতায় একে অন্যকে সাহায্যই করে।











