অহনের গল্প

গৌরী সর্ববিদ্যা | শনিবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

অহন কয়েকটা ছবি তুলে দিবি বাবা? হ্যাঁ মাসি, সুন্দর করে দাঁড়াও এক্ষুনি তুলে দিচ্ছি। ক্লিক! ক্লিক! ক্লিক! এইভাবে ছবি তুলে না অহন! অহন আমার ছোটবোনের ছেলে। বয়স দশবছর। দেখতে অনেক কিউট ও লক্ষ্মী। বাড়িতে গেলে যখনই বলি আমার সাথে চল চারপাশে একটু ঘুরে আসি … সাথে সাথেই রাজি হয়ে যায়। মাসি ছবি আর তুলবে না? বললাম, তুলবো না মানে! আমি যেখানে যেখানে দাঁড়াবো তুই সেখানেই ছবি তুলবি। আচ্ছা। আবার ক্লিক, ক্লিক, ক্লিক। অহন তুই অনেক ভালো ফটোগ্রাফার হতে পারবি। কিন্তু জানিস,একজন ফটোগ্রাফারের কিছু গুণাবলি থাকতে হয়? সাথে সাথেই বলে উঠলো … বলো মাসি কি করতে হবে। একটু পরপর যে ছবি তুলছিল, তার আগে দেখতে হয় … যার ছবি তুলছিস তার সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। যেমন : চুল, চেহারা ঠিক আছে কিনা, কাপড় চোপড় ঠিক আছে কিনা, দাঁড়ানোর জায়গাটা অন্ধকার কিনা, চারপাশ কেমন সব। এইসব খুঁটিনাটি একজন ফটোগ্রাফারকে ভালো করে দেখতে হয়। সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো তার খবরদারি। মাসি বাতাসে তোমার চোখে চুল উড়ে পড়ছে, ওরনা ঠিক করো। এই জায়গাটায় ছবি অন্ধকার আসছে। মনে মনে ভাবি এইছেলে একদিন ফটোগ্রাফার হবেই হবে। আমি আর আমার বান্ধবী দু’জনই বাসুদেব মন্দিরের কোণায় বসে ছবি তুলতে চাইলাম, বলে উঠলো মাসি ওখানে যেও না বিষাক্ত সাপ আছে, চলে এসো। দুইজন দৌড়ে চলে আসলাম। বাপরে! সাপকে কে ভয় না পায়! ঘুরতে ঘুরতে পুকুরের কোণায় এসে বললাম এখানে একটা ছবি তুলে দে’তো। মাসি ওদিকে যেও না অজগর সাপ আছে। কি কাণ্ড! এই ছেলে তো দেখি দুষ্টের শিরোমণি। এর মা তো ঠিকই বলে। আমি জন্মের পর এখানে অনেকবছর কাটিয়েছি। কখনো অজগর দেখিনি বুঝলি? অজগর থাকে বিদেশে। এখানে কোত্থেকে আসবে! হা হা করে হেসে দিলো। না…বয়স কম হলেও এইসব বলে ভোলানো গেলো না।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা তিনজন চলে গেলাম কালীবাড়ির দিকে। সামনে পরিচিত এক দাদার দোকানে বসে চা বিস্কুট খেলাম। কালীবাড়ির পেছন দিকটা খুব নিরিবিলি। জমিতে জমে থাকা জলে নীল-শাদা খন্ড আকাশের ছায়া যেমন মুগ্ধ করছিলো তেমনি ঠান্ডা বাতাস মন উতলা করছিল আরো কয়েকটা ছবি তুলতে।
আস্তে আস্তে বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম। একটা চিকন রাস্তা দেখে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। কিছু স্মৃতি মনে ভেসে এলো। পুকুর পাড়ে এদিকেই যাওয়া হয়। আমাদের বাড়িতে দুইজন চাষা ছিলো জমি চাষ করার। একজন মরিচ চাষ করেছিলো। লুকিয়ে মাকে না জানিয়ে মরিচ তুলতে গিয়েছিলাম।কেও দেখে ফেলবে সেই ভয়ে বাড়িতে এসে ভুলে গিয়েছিলাম হাত ধোয়ার কথা। চোখ কচলিয়ে আমার সে কি অবস্থা! চোখ জ্বলে শেষ! আরো কত কি মনে পরে গেলো। কিছুক্ষণ পর আবার বলতে শুরু করলো, ও মাসি …. ঝোপেঝাড়ে ছবি তুলতে যেও না চিতাবাঘ আছে তো! এবার ভাবলাম, এতো দেখি শুধু দুষ্টু না! ভারী দুষ্টু। আমি ছোটবেলা থেকে এখানে বড় হলাম কই এইসব তো কখনো শুনিনি। কাকিমা দুই হাত লম্বা করে টেনে পুকুরে ডুব দিচ্ছে। ও… কাকিমা, কাকিমা … অহন কি বলছে? এখানে নাকি চিতাবাঘ আছে সত্যি? কিছুদিন আগেএকটা কোত্থেকে জানি এসেছিল, পাড়ার লোকেরা ধরে চিড়িয়াখানার লোকদের ডেকে দিয়ে দিয়েছে। আরেকটা মাঝেমাঝে আসে, লোক দেখলে দৌড়ে ঝোপেঝাড়ে লুকিয়ে যায়। তারমানে অহন ভয় দেখানোর জন্য মিথ্যে বলছে না। দুষ্টু হতে পারে, মিথ্যা সে বলেনি! সত্যিই সে অনেক ভালো ও বুদ্ধিমান ছেলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমিও চূড়ান্ত দগ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধনারীর সাজসজ্জা ও আত্মমর্যাদা