চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. সামিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে ৫ দিনের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আদেশের ৬ষ্ঠ দিন থেকে সরাসরি অব্যাহতি পাইয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল ছাড়করণের চেষ্টার ঘটনায় মো. ফোরকানকে শাস্তিমূলক এ বদলি করা হল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও এমনটাই জানিয়েছেন। এর আগে আর্থিক সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হলেও তার পদে বহাল ছিলেন ফোরকান।
অফিশিয়াল চিঠি না পেলেও ফোরকানকে বদলির বিষয়টি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
প্রসঙ্গত, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে মের্সাস আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরের বকেয়া বিল বাবদ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার ব্যয় মঞ্জুরি আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে ছাড়করণের চেষ্টা হয়। গত ২৮ জুন জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান এ বিল ছাড়করণের চেষ্টা চালান। বিষয়টি ধরা পড়ায় বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে মো. ফোরকানকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে তাকে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
জালিয়াতির এ ঘটনা তদন্তে পরদিন (২৯ জুন) তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কমিটি গঠনের এ তথ্য জানানো হয়। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাখাওয়াত উল্ল্যাহকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীকে। আর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়া কমিটির সদস্য সচিব। তিন সদস্যের ওই কমিটিকে তদন্ত পূর্বক তিন কর্মদবিসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে আরো ৫ কর্মদিবস সময় চেয়ে আবেদন করে তদন্ত কমিটি। অবশ্য অতিরিক্ত ৫ কর্মদিবস শেষ হওয়ার আগেই গত ৬ জুলাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ দিকে, ঘটনার পরদিন (২৯ জুন) হিসাবরক্ষক মো. ফোরকানকে সকল ধরণের আর্থিক সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর ৩০ জুন এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই চারজন হলেন- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মুন্সি ফারুক, একই প্রতিষ্ঠানের সাজ্জাদ হোসেন ও মুকিত মন্ডল। বিলের অর্থ ছাড়করণে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র তৈরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে অভিযোগে।
উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে মের্সাস আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর কেনাকাটা নিয়ে দুদকে আগে থেকেই মামলা চলমান রয়েছে। মামলা থাকায় এর বিলও আটকে রয়েছে। এরই মাঝে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরি আদেশ তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে গত ২৮ জুন বকেয়া বিলটির অর্থ ছাড়করণের চেষ্টা করা হয়।