হল আমরা লিজ নিছি, যখন ইচ্ছা তোদের বের করে দেব

চবিতে সাংবাদিকদের রুম দখলের চেষ্টা, হুমকি ছাত্রলীগের

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ২০ জুন, ২০২২ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

সাংবাদিকদের রুম দখলের চেষ্টা ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার দুপুরে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। এতে স্বাক্ষর করেছেন চবিসাস সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওয়ায়দুল হক লিমন, একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশিষ দাস, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবির আহমেদ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রমিত রুদ্র ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ১০ জনের কথা জানিয়েছে চবিসাস। তারা সবাই সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী।

অভিযোগে বলা হয়, আলাওল হলের দ্বিতীয়তলায় পূর্ব ব্লকে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের আসন রয়েছে। অনেকদিন ধরে শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় নামধারী কর্মী সাংবাদিকদের অবস্থানরত কক্ষের প্রতি দখলদারি মনোভাব পোষণ করছে।

সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, ১৫ জুন রাত প্রায় দেড়টার দিকে আমাদের ব্লকে এসে নিলয়সহ ৫-৭ জন শিক্ষার্থী হৈ-হুল্লোড় করে চলে যান। পরদিন ১৬ জুন রাত ১২টার দিকে নিলয়সহ ১৫-২০ জন আমার কক্ষে ঢুকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগের ঘটনার রেশ ধরে চিল্লাচিল্লি ও গালিগালাজ করতে থাকেন। সাংবাদিকদের হেনস্থা করে তারা চলে যান। এরপর আরও দুই দফা এসে তারা সাংবাদিকদের হুমকি দেন। তাদের বক্তব্য ছিল এ রকম, ‘এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক খাই না। প্রক্টর খাই না।’

চবিসাসের সহসভাপতি আহমাদ সালমান বলেন, ছাত্রলীগ কর্মীরা বারবার সাইফুলের কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের মারার জন্য উদ্যত হয়। এছাড়া তারা বেশ কয়েকবার রুমের বাতি বন্ধ করে রুম ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পুরো ব্লকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ সময় অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ ও ওবায়দুল হক লিমনসহ সবাই অশ্রাব্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালি দিতে থাকেন। অপ্রকাশযোগ্য ভিডিও ও অডিও আমরা প্রক্টরের কাছে দিয়েছি।

তিনি বলেন, বিষয়টি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসকে জানানো হলে তিনি দেখছেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপরও সাংবাদিকদের হেনস্তা অব্যাহত থাকায় ইলিয়াসের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ইলিয়াসের পরোক্ষ মদদেই মূলত তারা বারবার এ রকম আচরণ করার সাহস পায়।

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা সাংবাদিকদের পাশে আছি।

বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, সাংবাদিকরা মঙ্গল গ্রহের প্রাণী। তারা যেটা ইচ্ছা সেটাই করতে পারবে।

শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আর আমরা আমাদের মতো তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল লিজ নেয়ার এখতিয়ার নাই ছাত্রলীগের। কোনো ছাত্রলীগ কর্মী এভাবে কথা বলতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার পর পর প্রক্টরিয়াল বডি ওখানে গিয়েছিল। শুধু সাংবাদিক না, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথেও কেউ খারাপ আচরণ করলে আমরা শক্তভাবে ব্যবস্থা নেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমধ্যরাতে ম্যানোলা বাংলোয় কী ঘটেছিল
পরবর্তী নিবন্ধস্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা খুনের প্রধান আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার