শনিবারের ভাষণে ইমরান খান বলেছিলেন, পাকিস্তান এখন নির্ণায়ক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই সংকটের সময় কোন পথে হাঁটতে হবে, তা বেছে নেওয়ার ভার দেশবাসীর উপরেই ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু গতকাল রোববার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বিরোধীদের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে ইমরান স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, গদির লড়াই থেকে এখনও ছিটকে যাননি তিনি। তবে তিনি এ-ও জানেন, কুর্সি টিকলেও শঙ্কা কাটেনি। এই অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী হতে চলেছে, তা নিয়ে নিজেও চিন্তিত তিনি।
সরকারের ঘোষণা মতো জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আনার প্রস্তুতি শুরু হবে নাকি অন্তর্র্বতী সরকার গড়ে আপাতত কাজ চালানো হবে নাকি বর্তমান সঙ্কট পাকিস্তানকে আরও এক বার সেনা শাসনের মুখে ঠেলে দিতে পারে এমন অনেক সম্ভাবনার কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ইসলামাবাদে।
পাকিস্তানের সময় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপর পার্লামেন্টে আলোচনা, বিতর্ক এবং তারপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। সেই অধিবেশন শুরু হলেও তৈরি হতে থাকে একের পর এক নাটকীয় মুহূর্ত। কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না খোদ ইমরানই। তখন তিনি প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির সঙ্গে দেখা করতে চলে গিয়েছেন। আর ততক্ষণে পার্লামেন্টে বিরোধীদের প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে অধিবেশন স্থগিত করে দিয়েছেন অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। পাক সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে তিনি জানিয়ে দেন, বিরোধীদের আনা প্রস্তাব আসলে ‘বিদেশি চক্রান্ত’। তা নিয়ে আলোচনা বা ভোটাভুটি কোনওটাই হবে না।
স্পিকারের এই সিদ্ধান্তের পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধীরা। তাঁদের প্রতিবাদস্বরূপ একটি নজিরবিহীন ঘটনারও সাক্ষী হয়ে রইল পাকিস্তান। পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা আয়াজ সাদিককে স্পিকার ঘোষণা করে কক্ষে নিজেদের মতো করে অধিবেশন শুরু করে দেন বিরোধীরা। যেখানে ১৯৬ জন (যা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে অনেক বেশি) সদস্যই ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেন।
স্পিকার নিজে যা মনে করেন, তার ভিত্তিতে কি তিনি অধিবেশন বাতিল করতে পারেন, তা কি সাংবিধানিক? এই প্রশ্ন তুলে পরে পাক সুপ্রিম কোর্টেও সুরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে বিরোধী পক্ষ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত, ডেপুটি স্পিকারের বিরোধীদের আনা প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্ত ‘অসাংবিধানিক’। তাঁদের দাবি, আস্থা ভোটের পক্ষেই রায় দিতে পারে শীর্ষ আদালত। সব মিলিয়ে পাকিস্তান যে এই মুহূর্তে সাংবিধানিক সংকটেও দাঁড়িয়ে, তা এক বাক্যে সকলেই মেনে নিচ্ছেন।
পাক-পার্লামেন্টে টানটান উত্তেজনার মাঝেই প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে অ্যাসেম্বলি ভেঙে নতুন করে নির্বাচনের সুপারিশ করেন ইমরান। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন আরিফ। এর পরেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ফারুক হাবিব ঘোষণা করেন, ৯০ দিনের মধ্যে দেশে নির্বাচন করবে সরকার। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সেনা শাসনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে। কারণ, ইতিহাস সাক্ষী, পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলেই ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছে সেনাকে। যদিও পাক সেনার তরফে জানানো হয়েছে, তারা রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে। ইমরান নিজেও রাজনীতির ময়দানে সেনাকে জমি ছাড়তে চাইছেন না বলে মত রাজনৈতিক মহলের।












