ফজলুর রহমান খান। বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী স্থপতি ও পুরকৌশলী। বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীদের অন্যতম। তাঁকে বলা হয় স্থাপত্যশিল্পের আইনস্টাইন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ ভবন শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার (উইলিস টাওয়ার)-এর নকশা প্রণয়ন করেন। তিনি ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ। পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ভাণ্ডারিকান্দি গ্রামে। ১৯৪৪ সালে আরমানিটোলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি কলকাতার শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে থেকে ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তত্ত্বীয় ও ফলিত মেকানিঙ-এ ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি শিকাগো শহরের স্কিডমোর, ওউইং ও মেরিল নামের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৫৬ সালে দেশে ফিরে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পূর্ব পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে আমেরিকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিড মোর এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে এ কোম্পানীর শিকাগো অফিসের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭২ সনে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ড’-এ ম্যান অব দি ইয়ার বিবেচিত হন এবং পাঁচবার স্থাপত্য শিল্পে সবচেয়ে বেশী অবদানকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত হবার গৌরব লাভ করেন (৬৫,৬৮,৭০,৭১,৭৯ সালে)। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সনে আমেরিকার ‘নিউজ উইক’ ম্যাগাজিন শিল্প ও স্থাপত্যের উপর প্রচ্ছদ কাহিনীতে তাঁকে মার্কিন স্থাপত্যের শীর্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে। স্থপতি ড. এফ, আর, খান আন্তর্জাতিক গগনচুম্বী ও নগরায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তাঁর অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে শিকাগোর জন হ্যানকক সেন্টার, জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের হজ্ব টার্মিনাল এবং মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য মডেল অঙ্কন। তাঁকে নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, লি হাই বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইস ফেডারেল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে তাঁকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। এ কৃতি স্থাপত্যশিল্পীর ৪০ তম মৃত্যুবাষির্কীতে তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।