বাংলাদেশে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, সুস্থ হয়ে ওঠার এক বছর পরও তাদের নানা ধরনের কোভিড পরবর্তী জটিলতা থেকে যাচ্ছে বলে উঠে এসেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান–আইইডিসিআরের এক গবেষণায়। আর যারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মত দুরারোগ্য অসংক্রামক রোগে ভুগছেন, তাদের কোভিড পরবর্তী জটিলতায় ভোগার ঝুঁকি দুই থেকে তিন গুণ বেশি। খবর বিডিনিউজের।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সহযোগিতায় আইইডিসিআরের ফিল্ড এপিডেমিওলজি ট্রেনিং প্রোগ্রাম (এফইটিপি–বি) কোভিড–১৯ রোগীদের প্রাথমিক উপসর্গ এবং পরবর্তী জটিলতাগুলো নিয়ে এই গবেষণা করেছে। তবে কবে থেকে এবং কতজন রোগীর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে তা জানায়নি আইডিসিআর।
কোভিডে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, স্বাদ–গন্ধের অনুভূতি লোপ পাওয়া, অবসাদ ও দুর্বলতার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সুস্থ হওয়ার পরও তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা থেকে যেতে পারে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সুস্থ হলেও মানুষের শারীরিক সিস্টেমে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে হাইপারটেনশন, রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়া, ঘুম না হওয়া, বুকে ব্যথা করা, মানসিক সমস্যা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়ার মত সমস্যা থেকে যেতে পারে।
এসব সমস্যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড–১৯ পরবর্তী জটিলতা বা ‘পোস্ট কোভিড কন্ডিশনস’ বলছে।
আইইডিসিআরের গবেষণার প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে একটি সার সংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে কোভিড থেকে সেরে ওঠার ৩ মাস পর ৭৮ শতাংশের শরীরে এ ধরনের কোভিড পরবর্তী জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ছয় মাস ৬ মাস পর ৭০ শতাংশ, নয় মাস পর ৬৮ শতাংশ এবং এক বছর পরও ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা এ ধরনের জটিলতায় ভোগার কথা বলেছেন।
আইইডিসিআর বলছে, অসংক্রামক ব্যাধি, যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কোভিড পরবর্তী উপসর্গের আশঙ্কা ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। এতে প্রতীয়মাণ হয় যে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কোভিড পরবর্তী উপসর্গে আক্রান্ত হওয়া কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া জরুরি।
আইইডিসির জানিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন, তাদের কোভিড পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি যারা ওষুধ সেবন করেন না, তাদের তুলনায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একইভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে নিয়মিত ওষুধ সেবনকারীদের কোভিড পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি যারা ওষুধ সেবন করেন না তাদের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ কমে যায়।