শীতকাল-ভালোলাগার অন্য এক নাম। শীতের সকালের কল্পনা ঘন কুয়াশা আর আবছা আবহাওয়া ছাড়া অসম্ভব। কুয়াশা ঘন চাদরের ফাক দিয়ে উঁকি মেরে ঘোষণা করে সে তার হিম-শীতল আগমনী বার্তা। প্রকৃতি তার রূপ-রস-বর্ণ ঝেড়ে ফেলে বিদীর্ণ রূপ ধারণ করে।
শহরে শীতের সকালটা গ্রামীণ পরিবেশের মত আমেজে নয়, বরং একটু ভিন্ন আঙ্গিকেই কাটে। শীতের সকালে শহরবাসীর ঘুম বিভিন্ন পাখির কলরবে না ভাঙলেও, ভাঙে কাকের ডাকে। শীতের সকালটা শহরবাসী ঘুমের মধ্যেই কাটিয়ে দেয়। শীতের সকালে তাদের লেপের উষ্ণতা ছেড়ে কাজ কর্মে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না। যাদের সকালে উঠতে হয় তারাও ছুটির দিনে বেশ দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। তাই শহরের লোকেরা গ্রামের মানুষদের মতো শীতের সকালকে উপভোগ করে তুলতে পারে না। আর শহরে পিচ ঢালা রাস্তা কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে, শিশিরও পড়ে তবে গ্রামের মতো শিশির ভেজা ঘাসের ছোঁয়ায় মন আন্দোলিত হয় না। শীতের সকালে উঠে কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুতে ইচ্ছে করে না বড়দেরও, ছোটোরা তো ঠাণ্ডা পানির ভয়ে স্কুলে না যাওয়ার নানান বাহানায় লেপ মুড়ি দিয়ে থাকে। শহরের মানুষদের সূর্যোদয় দেখা, সূর্যাস্ত দেখা, শীতের সকালের কুয়াশা দেখার মন-মানসিকতা নেই। যান্ত্রিক জীবনে যারা অভ্যস্ত তাদের কাছে ওসব হলো আবেগের ব্যাপার। তবে শহরের লোকেরা রংবেরঙের শীতের কাপড়ের মাধ্যমে শীতের সকালকে বরণ করে। কোট, জ্যাকেট, সোয়েটার, টুপি, চাদর, মাপলার প্রভৃতি আরামদায়ক পোশাক জড়িয়ে শীতের সকালে নিজ নিজ কর্মস্থলে বেরিয়ে পড়ে। অফিসে যেতে একটু দেরি হলেই প্রথম কথায় চলে আসে, উফফ! আজকে যা শীত পড়েছে, হাড় কাপানো শীত একদম। তারপর এক চুমুক গরম লাল চা দিয়ে শুরু হয় দিনের কাজ-কর্ম। কর্মব্যস্ত এই শহর কেড়ে নিচ্ছে প্রতিটি ঋতুর নিজস্বতা, ভাল লাগা আর উপভোগ করার মানসিকতা। তবুও শহরবাসী ছুটে চলেছে প্রতিনিয়ত জীবনের নতুন অধ্যায়ের সন্ধানে। লেখক: শিক্ষার্থী