কে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল আনা ফ্রাঙ্কের সঙ্গে?

৭৭ বছর পর মিলল সমাধানসূত্র

| মঙ্গলবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

হৃদয়স্পর্শী ডায়েরি লিখে পৃথিবীজুড়ে আলোচিত কিশোরী আনা ফ্রাঙ্ক মারা যান ১৯৪৫ সালে। তার কয়েকমাস আগে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের একটি গোপন জায়গা থেকে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নাৎসি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন। এরপর থেকেই ফ্রাঙ্ক পরিবার কীভাবে ধরা পড়ল তা প্রশ্ন হয়ে আছে। তাদের সঙ্গে কে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আজ ৭৭ বছর পর নতুন এক তদন্তে আমস্টারডামে একজন ইহুদি নোটারিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম আরনল্ড ভ্যান ডেন বার্গ বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর সাবেক এক এজেন্টসহ ইতিহাসবিদ এবং অন্যান্য আরও প্রায় ২০ জন বিশেষজ্ঞের একটি তদন্ত টিম। খবর বিডিনিউজের।
বিবিসি জানায়, বহু বছরের পুরোনো অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধান বের করতে এই বিশেষজ্ঞ দল আধুনিক তদন্ত কৌশল কাজে লাগিয়ে ৬ বছর ধরে তদন্ত করেছে। তদন্ত শেষে তারা বলছেন, ভ্যান ডেন বার্গ খুব সম্ভবত নিজের পরিবারকে বাঁচাতে আনা ফ্রাঙ্ক পরিবারকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
ভ্যান ডেন বার্গ ছিলেন আমস্টারডামের ইহুদি কাউন্সিলের সদস্য। এই কাউন্সিলকে ইহুদি এলাকায় নাৎসী নীতি বাস্তবায়নে বাধ্য করা হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে এই কাউন্সিল ভেঙে দেওয়া হয় এবং এর সদস্যদেরকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। কিন্তু তদন্তকারী দলের তদন্তে দেখা গেছে, ভ্যান ডেন বার্গকে ওই সময় ক্যাম্পে পাঠানো হয়নি। তিনি তখন বহাল তবিয়তে আমস্টারডামেই বাস করছিলেন। তাছাড়া, ইহুদি কাউন্সিলের এক সদস্য নাৎসীদেরকে তথ্যপাচার করছেন এমন কথাও শোনা গিয়েছিল। সিবিএস নিউজের ‘সিঙটি মিনিটস’ প্রোগ্রামে এফবিআই এর সাবেক এজেন্ট ভিন্স প্যানকোক বলেছেন, ভ্যান ডেন বার্গ যখন সব সুরক্ষাই খুইয়েছিলেন; ক্যাম্পে যাওয়া ছাড়া যখন তার আর কোনও উপায় ছিল না, তখন তাকে নাৎসীদেরকে মূল্যবান কোনওকিছু দিতে বাধ্য হতে হয়েছিল। আর এর বিনিময়েই তিনি ও তার স্ত্রী নিরাপদে থেকে যেতে পেরেছিলেন। তদন্ত দল বলছে, আরেকজন ইহুদিই বিশ্বাসঘাতক; এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু তারা এমন প্রমাণও পেয়েছেন, যা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আনার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক হয়ত নিজেও জানতেন বিশ্বাসঘাতক কে। কিন্তু জেনেও তিনি তা গোপন রেখেছিলেন। আগের এক তদন্তকারীর ফাইলে বিশেষজ্ঞ দল অটো ফ্রাঙ্কের কাছে পাঠানো অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লেখা চিরকুট পেয়েছেন। তাতেই বিশ্বাসঘাতক হিসাবে উল্লেখ করা ছিল আরনল্ড ভ্যান ডেন বার্গের নাম। কিন্তু তখন ইহুদি-বিদ্বেষের কারণে হয়ত এই নাম গোপন রাখা হয়েছিল বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ টীমের সদস্য সাবেক এফবিআই এজেন্ট ভিন্স প্যানকোক। তিনি বলেন, সম্ভবত তিনি (অটো ফ্রাঙ্ক) তখন ভেবেছিলেন এই নাম বলে দিলে তা কেবল আগুনে ঘি ঢালাই হবে। প্যানকোক আরও বলেন, কিন্তু, আমাদেরকে এ সত্যটাও মাথায় রাখতে হবে যে, ভ্যান ডেন বার্গ একজন ইহুদি ছিলেন। তার মানে নাৎসীরা তাকে এমন নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলেছিল যে, তাকে তার জীবন বাঁচাতে কিছু একটা করতেই হত।
ডাচ পত্রিকা ডি ভল্কসক্রান্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যান ডেন বার্গ ১৯৫০ সালে মারা গেছেন। আনা ফ্রাঙ্কের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার সন্দেহে গত কয়েকদশকে কয়েকডজনেরও বেশি মানুষের নাম শোনা গেছে। তবে আগে কখনওই আধুনিক তদন্ত কৌশল কাজে লাগিয়ে সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করার এমন চেষ্টা চলেনি। আনা ফ্রাঙ্ক হাউজ মিউজিয়াম এক বিবৃতিতে তদন্তকারী দল চমৎকার কাজ করেছে বলে প্রশংসা করেছে। তদন্ত থেকে নতুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে এবং এই সূত্র ধরে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখার পট প্রস্তুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিউজিয়ামের নির্বাহী পরিচালক। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা সরাসরি তদন্তে জড়িত ছিল না। তবে তদন্ত দলকে তাদের আর্কাইভ এবং মিউজিয়াম ব্যবহার করতে দিয়েছে। আনা ফ্রাঙ্ক কয়েক দশক ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় অধ্যায় হোলোকাস্টের বড় একজন সাক্ষী। নাৎসি বাহিনী নেদারল্যান্ডসে অভিযান চালানোর সময় আনা ও তার পরিবার দুই বছর একটি গোপন জায়গায় লুকিয়ে ছিল। এত দীর্ঘ সময় লুকিয়ে থাকা এই মানুষগুলোই ১৯৪৪ সালের ৪ অগাস্টে ধরা পড়েন। সেই সময় ১৫ বছর বয়সী আনাকে প্রথমে ওয়েস্টারবর্কের একটি শিবিরে নেওয়ার পরে নেওয়া হয় জার্মানির নাৎসি বাহিনীর শিবিরে। সেখানে ১৯৪৫ সালে অর্থাৎ, বিশ্বযুদ্ধ শেষের বছরে রোগে ভুগে মারা যান আনা ফ্রাঙ্ক। কেবল বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন আনার বাবা। ১৯৪৭ সালে প্রকাশ করা হয় আনার ডায়েরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেসিকে হারিয়ে ফিফার বর্ষসেরা লেভানদোভস্কি
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ পরিবার পেল সহায়তা