৬০ বছরের প্রতীক্ষার অবসান

স্বপ্নের নানিয়ারচর সেতু উদ্ধোধন আজ

রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘ রাঙামাটির নানিয়ারচর সেতু আজ বুধবার উদ্বোধন হবে। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করবেন।
দীর্ঘ ৬০ বছর পর নানিয়ারচরে এই সেতু নির্মাণের ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় অনেক সহজ হবে। এতে করে নানিয়ারচরে স্থানীয় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। পাশাপাশি এ সেতুর মাধ্যমে রাঙামাটির লংগদু, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে বাঘাইছড়ির সাজেকে অল্প সময়ে পৌঁছানো যাবে। এরই মধ্যে সেতুটি রাঙামাটির ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাঙামাটি জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকেও পর্যটকরা দৃষ্টিনন্দন সেতুটি দেখতে আসছেন।
নানিয়ারচর সেতু প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইসি ব্রিগেডের ২০ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)। ৫শ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্থ এই সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় ২২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
নানিয়ারচরের সন্তান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, আমি এই এলাকার সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় আমরা ব্রিজটি পেয়েছি। তাই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই মাননীয় সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও আমাদের সাংসদ দীপংকর তালুকদারকে। তিনিও এই ব্রিজটির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
তিনি বলেন, এটি একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। নানিয়ারচর সড়কের মধ্য দিয়ে বাঘাইছড়ি, লংগদু হয়ে খাগড়াছড়ির মাধ্যমে সহজে সাজেকে যাওয়া যাবে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘ নানিয়ারচর সেতুটি ১২ জানুয়ারি উদ্বোধন হবে। সেতুটির ফলে এ উপজেলার মানুষের দীর্ঘ বছরের কষ্ট লাঘব হতে চলেছে।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি রহমান তিন্নি জানান, উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন শেষে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, আজ নানিয়ারচরের সাপ্তাহিক হাট বসে। কিন্তু সেতুর উদ্বোধনের কারণে হাটটি একদিন পিছিয়ে বৃহস্পতিবার বসবে।
১৯৬০ সালে হ্রদ সৃষ্টির পর থেকেই চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয় অধিবাসীরা। রাঙামাটি সদর-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এখানে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।
দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় স্থানীয়রা খুশি। তবে এখনই এই সেতুর সুবিধা পুরোপুরি পাচ্ছে না লংগদু ও বাঘাইছড়ির মানুষ। কারণ, নানিয়ারচর থেকে লংগদু উপজেলায় যাতায়াতের ১৮ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি সড়ক এখনও নির্মাণ হয়নি। সেটি নির্মাণ হলেই লংগদুর সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলার মানুষ এখন খাগড়াছড়ি হয়ে রাঙামাটি যাতায়াত করেন। এই ১৮ কিলোমিটার সড়ক হয়ে গেলে বাঘাইছড়ির মানুষও দীঘিনালা-লংগদু হয়ে সরাসরি জেলা সদরে আসতে পারবে। এতে সময়, অর্থ আর শ্রম বাঁচবে।
নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, একটি সেতুর মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন সহজেই জেলা সদরে নৌপথ ছাড়াই যাতায়াত করতে পারব। এছাড়া উপজেলায় উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণে ভোগান্তি কমে আসবে। আস্তে আস্তে এর সুফল পেতে শুরু করবে পাশের লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার মানুষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই বছর পর কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট চালু
পরবর্তী নিবন্ধহত্যা মামলায় সাক্ষী দেওয়ায় গৃহবধূ লায়লাকে হত্যা