তিন দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের পুরো উল্টো চিত্র দেখা গেল গতকাল। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে দুর্দান্ত বাংলাদেশের বোলিং ক্রাইস্টচার্চে এসে হয়ে গেল একেবারে নখদন্তহীন। অথচ ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের সবুজ উইকেটে আগুন ঝরার কথা ছিল এবাদত, তাসকিন, শরীফুলদের বোলিংয়ে। সেটাতো হলোই না উল্টো প্রথম দিনেই রানের নিচে চাপা পড়েছে বাংলাদেশ। বলা যায় ক্রাইস্টচার্চে হতাশার একদিন কেটেছে বাংলাদেশের। নিউজ্যিলান্ডের ব্যাটসম্যানরা ছড়ি ঘুরাচ্ছে বাংলাদেশের বোলারদের উপর। প্রথম দিনেই স্বাগতিকরা এক উইকেটের বিনিময়ে তুলে নিয়েছে ৩৪৯ রান।
সবুজ উইকেট দেখে টসে জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু তার আশা হতাশায় পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। বলা যায় বাংলাদেশের আশায় জল ঢেলে দিয়ে রানের বন্যা বইয়ে দিল নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমে সারা দিনই ব্যাট করেছেন কিউই ওপেনার টম ল্যাথাম। দিন শেষে তিনি অপরাজিত ১৮৬ রানে। উইল ইয়ংকে নিয়ে ইনিংসের সূচনা করতে নেমেছিলেন টম ল্যাথাম।
১৪৮ রান যোগ করেন দুজন। যা এই মাঠে সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি। ১১৪ বলে ৫৪ রান করা ইয়ংকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন শরীফুল। এরপর ডেভন কনওয়েকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা পার করে দেন নির্বিঘ্নে। শুধু দিনটা পার করেননি দুজন। যোগ করেছেন ২০১ রান। আর সেখানেও আরেকটি রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন ল্যাথাম। তা হচ্ছে এই মাঠে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। আর সেটা আজ আরো বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ম্যাচের প্রথম দিনে সময় যতই গড়িয়েছে ততই বাংলাদেশের বোলিংয়ের ধার কমেছে। সেটা বুঝা যায় প্রতি সেশনে নিউজিল্যান্ডের রান তোলার গতি থেকে। প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৯২ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। মাঝের সেশনে ইয়াংকে হারিয়ে ২৯ ওভারে তুলে নেয় ১১০ রান। শেষ সেশনে আরো আগ্রাসী দুই কিউই ব্যাটসম্যান ৩৬ ওভারে যোগ করে ১৪৭ রান।
দিন শেষে ১৮৬ রানে অপরাজিত থাকা ল্যাথামের এটি দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি। অধিনায়ক হিসেবে আগের ৫ টেস্টে ছিল না কোনো হাফ সেঞ্চুরিও। কনওয়ে দিন শেষ করেন ৯৯ রানে। এই ব্যাটসম্যান এখন অপেক্ষায় পঞ্চম টেস্টে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার। কিউইদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি রান বন্যা বইয়ে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের বাজে বোলিং। আগের টেস্টের লেংথেই বল করে গেছেন পেসাররা। তবে খুব বেশি মুভমেন্ট আদায় করতে পারেননি কেউ। দিনের একমাত্র উইকেটটি নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। তবে তিন পেসারের মধ্যে মন্দের ভালো বোলিং করেন কেবল তাসকিন আহমেদ। আগের টেস্টের নায়ক এবাদত হোসেন সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন কিছু। তবে সেগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। পেসারদের ব্যর্থতার প্রথম দিনেই ২৫ ওভার বোলিং করেছেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তিনিও পারেননি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের উপর কোন ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে।
লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই ভাঙতে পারতো স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটি। এবাদতের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন ইয়াং। কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপ থেকে ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়ে সেটি ফেলে দেন লিটন দাস। উল্টো ওভারথ্রো থেকে ওই বলে আসে ৭ রান। ২৬ রানে জীবন পেয়ে ইয়াং শেষ পর্যন্ত আউট হন ৫৪ রানে। ল্যাথাম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৩৩ বলে। দিন শেষে ২৭৮ বলে ১৮৬ রানের ইনিংসে চার মেরেছেন ২৮টি। অপরদিকে ১৪৮ বলে ১০টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ৯৯ রানে অপরাজিত আছেন কনওয়ে। আজ দিনের শুরুতেই হয়তো সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলবেন কনওয়ে। তবে ল্যাথামও এগিয়ে যাবেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে। প্রথম দিনেই রান বন্যা বইয়ে দেওয়া নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে সেটাই এখন দেখার।