যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাসে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর শুভক্ষণে এবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান দু’টি পর্বে ভাগ করে উদযাপন করা হয়।
প্রথম পর্ব শুরু হয় সকাল সাড়ে নয়টায় দূতাবাসের সকল সদস্যের উপস্থিতিতে। দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ, এনডিসি। তারপর মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে দিবসটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ২য় পর্ব শুরু হয় বিকেল ছয়টায়।
এ বছর মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পাঠ। নতুন প্রজন্ম সহ সর্বস্তরের জনগণকে জাতির পিতার আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়া এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে দূতাবাসে উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন যথাক্রমে দূতালয় প্রধান এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রেদোয়ান আহমেদ, প্রথম (সচিব শ্রম) মুতাসিমুল ইসলাম, কাউন্সিলর দীন মোহাম্মদ ইনামুল হক।
তারপর আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সরওয়ার মাহমুদ, এনডিসি।
শুরুতেই তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শাহাদাত বরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
তিনি স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সরওয়ার মাহমুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রুপকল্প ২০২১, রুপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ বছরই স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য আমরা জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর।”
তিনি বলেন, “২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বিশ্বশান্তি রক্ষা, শান্তি-বিনির্মাণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়ন সহ অসংখ্য বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ নেতৃত্বশীল ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা আজ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ। আশা করা যায়, ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। কোভিড ব্যবস্থাপনা ও অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের কাছে আজ রোল মডেল বাংলাদেশ।”
তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের রূহের মাগফিরাত এবং দেশের সুখ-সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
আলোচনা সভায় বিজয় দিবসের তাৎপর্য এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার ওপর স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন স্পেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস আর আইএস রবিন ও সাধারণ সম্পাদক রিজভী আলম, সহ-সভাপতি একরামুজ্জামান কিরণ, বাংলাদেশ এসোসিয়েসন ইন স্পেন-এর সাধারণ সম্পদক কামরুজ্জামান সুন্দর, স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ, স্পেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান দিদার, আজম কাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল কামালী, আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট তারেক হোসাইন বেলাল আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা হানিফ মিয়াজী।
দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেখানে কবিতা আবৃত্তি, দেশের গান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।