ফেইম : সুন্দরের নিপুণ আবাদ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

‘মানব হৃদয়ে শাশ্বত সৃজন প্রতিভা, যে সকল সূক্ষ্ম কর্মের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় তা-ই শিল্পকলা’। শিল্পকলার বিভিন্ন শাখা যেমন- নৃত্য, নাট্য, সংগীত ইত্যাদির শাস্ত্রীয় ও পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণ এবং তার সঠিক অনুশীলনের অভিপ্রায়েই ১৯৯৮ সালের ১৮ জুলাই যাত্রারম্ভ ফেইম স্কুল অব ডান্স, ড্রামা এন্ড মিউজিক-এর।
দিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে নাট্যকলায় অসীম দাশ এবং ন্যাশনাল ইন্‌স্টিটিউট অব কত্থক ডান্স থেকে তিলোত্তমা সেনগুপ্তা নৃত্যকলায় প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামে ফিরে গড়ে তুলেন ফেইম স্কুল অব ডান্স, ড্রামা এন্ড মিউজিক। ফেইমের শুরুটা হয় চেরাগী পাহাড়স্থ উদীচী কার্যালয়ে। পরে এর কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয় ফিরিঙ্গবাজারস্থ কবিরাজ ভবনে। নাট্যকলার সাথে যুক্ত হয় নৃত্যকলা ও সংগীত। নাট্যকলায় অসীম দাশ, নৃত্যকলায় তিলোত্তমা সেনগুপ্তা আর সংগীত বিভাগে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন গণসংগীত শিল্পী অশোক সেনগুপ্ত। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’র নাট্যক্রমের অনুপ্রেরণায় চলতে থাকে ছয় মাস মেয়াদী অভিনয় কোর্স। সাথে চলতে থাকে কত্থক নৃত্য এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ।

২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর আলিয়ঁস ফঁ্রসেজ- চট্টগ্রামের সহযোগিতায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ- চট্টগ্রাম মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় মলিয়্যের রচিত ‘লে ম্যারেজ ফোর্স’ এর অনুবাদ অসীম দাশ নির্দেশিত ‘বিয়ে বিড়ম্বনা’। যদিও এর আগে ২০০০ সালের ৪-৯ ফেব্রুয়ারি ফেইম পরিচালক অসীম দাশের নির্দেশনায় চট্টগ্রামের ৪টি দলের নাটক নিয়ে ‘বিগত দিনে বিচিত্র বোধনে অসীম দাশের ঋদ্ধ নির্দেশনা’ শীর্ষক পাঁচ দিনব্যাপি উৎসবের আয়োজন করে ফেইম। শেষ দিন ছিল তিলোত্তমা সেনগুপ্তার একক কত্থক নৃত্যের পরিবেশনাও। ফেইমের নিয়মিত মঞ্চায়নের আগে প্রতিদিন মিলনায়তনের বাইরে পরিবেশিত হয় ফেইম নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ক্লাস ওয়ার্ক। বর্তমানে ফেইমের নাট্যকলা বিভাগের দুটি কোর্স চালু রয়েছে। অভিনয়ের জন্য ৪৮টি ক্লাসের চার মাস মেয়াদী ‘এক্টরস স্টুডিও’ এবং ১০টি ক্লাসে তিন মাস মেয়াদী ডিজাইন ও ডিরেকশনের ‘ডিরেক্টরস ল্যাব’। ইতিমধ্যে এক্টরস স্টুডিও’র ২৩টি ব্যাচ এবং ডিরেক্টরস ল্যাব’র ৬টি ব্যাচে প্রায় চার শতাধিক নাট্যকর্মী প্রশিক্ষণ নিয়ে থিয়েটার চর্চা অব্যাহত রেখেছে। ২০০৮ সাল থেকে ফেইমে শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদী শিশুনাট্য ও আবৃত্তি বিভাগ। বিভাগটির শিশুরা নাটক ও শ্রুতি পরিবেশনায় নিয়মিত সরব থেকেছে। মঞ্চে এনেছে নিজস্ব পূর্ণাঙ্গ নাট্য প্রযোজনা ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘ইচ্ছেপূরণ’, ‘ঘুড়ি’, ‘লাল কমল নীল কমল’, ‘মধ্যমপুত্র’। এছাড়াও শ্রুতি প্রযোজনা ‘ছড়ার ছড়াছড়ি’, ‘ফোন, চিঠি ও কলম কথা’, ‘রূপকথার ছেলেটি’ বরাবরই মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
চর্চা ও মননে সুন্দরের নিপুণ আবাদ্ল-এই প্রত্যয়ে ২৪ বছরের পথচলায় ফেইম নাট্যকলা বিভাগ নিয়মিত মঞ্চে এনেছে বিশ্বনাট্য সাহিত্যের পুরোধা নাট্যকারদের কালজয়ী সব নাটক মলিয়্যের-এর ‘বিয়ে বিড়ম্বনা’, ‘জর্জ দ্যঁদ্যাঁ’, জ্যঁ আনুঈর ‘অন্তিগঁ’, জ্যঁ জিরাদুর ‘শাইলোর উন্মাদিনী’, হেনরিক ইবসেনের ‘দ্য ঘোস্ট’, ফ্রানয্‌ কাফকার ‘দ্য ট্রায়াল’, ‘মেটামরফোসিস’, সফোক্লিসের গ্রিক ট্রিলজী-‘ইডিপাস’, ‘ইডিপাস অ্যাট কলোনাস’ এবং ‘আন্তিগোনে’, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুক্তির উপায়’, ‘রক্তকরবী’, ইউজিন আয়োনেস্কোর ‘দ্য লিডার’, ‘দ্য লেসন’, ‘রাইনোসেরস’, হেলেন সিঙুসের ‘ড্রামস্‌ অন দ্য ড্যাম’, স্যামুয়েল বেকেটের ‘অল দ্যাট ফল’, ‘ট্রায়ও (ওহিও ইম্প্রম্পটু, এহ জো, ক্যাটাস্ট্রফি)’, ‘ওয়েটিং ফর গড’, অসীম দাশের সম্পাদনায় ‘নকিং’, কার্লো গোলদোনির ‘দ্য সারভেন্ট অব টু মাস্টারস’, আলব্যের ক্যামুর ‘ক্যালিগুলা’, ‘ল্য জুস্ত’, ফরাসী সাহিত্যিক অন্দ্রে মালরোর জীবন নিয়ে অসীম দাশের সম্পাদনায় ‘দ্য হোপ’।
গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে দক্ষ সাঁতারুর মত যে কোনো বিপরীত ধারাতেও যাত্রা অব্যাহত রাখার মত দক্ষ ও নিষ্ঠাবান শিল্পী সৃষ্টির প্রয়াসে ফেইম অঙ্গীকারাবদ্ধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিজয়ের মাসে সন্দীপনার নানা আয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের কৃষিবান্ধব পদক্ষেপে দেশে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে