ইন্ধনদাতাদের খুঁজছে পুলিশ

কুমিল্লার ঘটনা

| সোমবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার অভিযোগে ইকবাল হোসেনসহ চারজনের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৯৯৯-এ কল করা ইকরাম ও মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখা ইকবালকে প্রাধান্য দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি। সঙ্গে আছেন একদল চৌকস কর্মকর্তা। গতকাল বিকাল পর্যন্ত খবরে জানা যায়, প্রথম দিন ইকরাম ও ইকবালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছেন সে ব্যাপারে তারা এখনো মুখ খোলেননি। সূত্র জানায়, তারা দুজনই মাদকসেবী। মাদক ব্যবসার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এটি স্পর্শকাতর। আমরা প্রতিটি বিষয়কে ধরে ধরে আগানোর চেষ্টা করছি। ঘটনার গভীরে কাদের ইন্ধন রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর আগে শনিবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় চারজনকে কুমিল্লা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের তোলা হয়। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। বিচারক তাদের সাতদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ইকবালকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার বেলা ১২টার সময় কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে।
মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল। কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে তিনি। নূর আলম মাছ ব্যবসা করেন। ইকবালের মা আমেনা বেগম জানান, ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা করা শুরু করেন। দশ বছর আগে বিয়ে করেন। ওই ঘরে এক ছেলে। পাঁচ বছর পরে ডিভোর্স হয়। তারপর তিনি জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে বিয়ে করেন। এ সংসারে তার এক ছেলে, এক মেয়ে। ইকবালের স্ত্রী-সন্তান এখন কাদৈর গ্রামে থাকেন। আমেনা বেগম জানান, ইকবাল নেশাগ্রস্ত হয়ে নানাভাবে পরিবারের সদস্যদের ওপর অত্যাচার করতেন।
ইকবাল পঞ্চম শ্রেণি পাস। ১০ বছর আগে বন্ধুদের সঙ্গে অন্য পাড়ার আরো কিছু ছেলের সঙ্গে মারামারি হয়। এ সময় ইকবালকে পেটে ছুরিকাঘাত করে। তখন তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তারপর থেকে তিনি অপ্রকৃতস্থ।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ইকবাল মাদক সেবনের পাশাপাশি টুকটাক মাদক বিক্রি করতেন। অপ্রকৃতস্থ হলে তিনি মাদক বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতেন না। এ ঘটনায় কারও ইন্ধন থাকতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইকবালের পরিবার স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেলের মালিকানাধীন বস্তি এলাকায় ভাড়া থাকেন। তাদের নানা কাজে সহায়তা করতেন কাউন্সিলর।
পুলিশ বলছে, কাউন্সিলরের এক ভাতিজার সঙ্গে ইকবালের ঘনিষ্ঠতা আছে। সেও মাদকসেবী। ইকবাল রঙের কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে নির্মাণ কাজের সহযোগী হিসেবেও কাজ করতেন।
এদিকে বুধবার ৯৯৯-এ কল করেন ইকরাম হোসেন (৩০)। ইকরাম নগরীর কাশারিপট্টির রিকশাচালক বিল্লাল হোসেনের ছেলে। তিনি বিবাহিত হলেও উগ্র ও মাদকাসক্ত হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে। তিনি পাইপ মিস্ত্রির কাজ করেন। মঙ্গলবার রাতে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরিয়ে যান। সারারাত বাইরে থাকেন। বুধবার সকালে নানুয়ার দিঘির পাড়ে গিয়ে ৯৯৯-এ কল করে ইকরাম। তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। সিসিটিভি ফুটেজে ইকবাল মসজিদে যাওয়ার দুই মিনিট পর ইকরামকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়।
একটি সূত্রে জানা যায়, ইকরামকে পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর থেকে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইকরাম সিটি মেয়রপন্থী রাজনীতি করেন। কুমিল্লার একটি অভিজাত মার্কেটের নাতির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক। ওই ব্যক্তিও মাদকসেবী। পুলিশ সবগুলো ঘটনার হিসেব মেলানোর চেষ্টা করছে।
ইকরামের মা সেলিনা আক্তার জানান, স্থানীয় বখাটেদের সঙ্গে মিশে আমার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবরার হত্যায় ২৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে
পরবর্তী নিবন্ধজ্বীনের বাদশা সেজে প্রতারণা, পাঁচ প্রতারক আটক