উচ্ছেদ হবে সব অবৈধ স্থাপনা

পরীর পাহাড় ।। থাকবে না আইনজীবী সমিতিরি পাঁচ ভবনও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের প্রস্তাবনা অনুমোদন প্রধানমন্ত্রীর

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচটি ভবনসহ পরীর পাহাড়ে গড়ে ওঠা অননুমোদিত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের প্রস্তাবনায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরীর পাহাড়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ৭১টি আদালত ছাড়া বাদবাকি সব স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হবে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার স্মারক নম্বর :০৪.০০.০০০০.৫১২.১৬.০০২.১৮.৩৮৭ মূলে গত সোমবার জারিকৃত সার্কুলারে বলা হয়েছে যে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গৃহীত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বাস্তবায়নের অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্যও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
আগস্ট ২০২১-এর দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের গোপনীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রস্থলে পাহাড়ের চূড়ায় প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ে অবস্থিত। এ অংশে রয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ সর্বমোট ৭১ টি আদালত। জেলা প্রশাসকের নামে এখানে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১.৭২ একর জায়গা রয়েছে। সরকারি ভবনের বাইরে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি পাহাড় এবং টিলা কেটে অবৈধভাবে ৫ টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ সকল স্থাপনাকে পাহাড় ধস, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদির জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করেছে। সমপ্রতি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আবারও সরকারের কোনো সংস্থার অনুমোদন ব্যতিরেকে ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’ ও ‘একুশে আইনজীবী ভবন’ নামক দুইটি ১২ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে এবং ৬০০ টি চেম্বার বরাদ্দের জন্য আইনজীবীদের নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা করে ১২ কোটি টাকা আদায় করেছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
গোপনীয় রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, এছাড়াও কোর্ট বিল্ডিংয়ের চতুর্পার্শ্বে আইনজীবীগন অর্ধশতাধিক অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ দোকানপাট, খাবার হোটেল, ছাত্রাবাস, বস্তি ও মুদি দোকান তৈরি করে ভাড়া আদায় করছে এবং এই স্থাপনাটিকে একটি অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। এখানকার অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ২০১২ সালে এই কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় জঙ্গি হামলাও হয়েছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সমপ্রতি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষার্থে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরাসমূহও আইনজীবী নেতৃবৃন্দ অপসারণ করেছেন বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনজীবীগণ কর্তৃক সিসিটিভি ক্যামেরা অপসারণ করে ফেলার কারণে অপরাধীরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আইনজীবীদের এ সকল স্থাপনার অনেক বিদ্যুৎ লাইন ও পানির লাইনের সংযোগও অবৈধভাবে নেওয়া হয়েছে বলে গোপনীয় প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আইনজীবীদেরকে উশৃংখল আচরণের জন্য দায়ী করে বলা হয়, ইতোপূর্বে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ২ টি বড় কক্ষও দখল করে নিয়েছেন।
প্রতিবেদনটিতে প্রস্তাবনা প্রদান করা হয় যে, চট্টগ্রাম কোর্ট হিল এলাকায় সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় শ্রেণির জমিতে ইতোমধ্যে স্থাপিত সম্পূর্ণ অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল স্থাপনাসমূহ অপসারণ করা এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি যেন আবারও অবৈধভাবে খাস জমি দখল করে কোর্ট বিল্ডিংয়ের সম্মুখস্থ একমাত্র ফাঁকা জায়গাটিতে কোন অবকাঠামো নির্মাণ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা গ্রহণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন ও বিচার বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। উপরোক্ত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হলে তাতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের অননুমোদিত সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, পরীর পাহাড়ে বহু অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। ইট পাথরের জঞ্জালে পরিণত করা হয়েছে নগরীর অন্যতম ঐতিহাসিক এই পাহাড়টিকে। এটিকে রক্ষা করে পরীর পাহাড়কে পরীর পাহাড়ের মতো করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাই মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৩০ টাকার অপারেটর এখন ৪৬০ কোটি টাকার মালিক
পরবর্তী নিবন্ধদেশে মৃত্যু ছাড়াল ২৭ হাজার