নগরীর বায়েজিদ থানাধীন হাটহাজারি সড়কের আতুরার ডিপোতে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) মালিকানাধীন এশিয়াটিক কটন মিলের সম্পদ। জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সম্পদ ও যন্ত্রপাতি বিক্রি ও হস্তান্তর করে পরস্পর যোগসাজসে এক কোটি ৫৩ লক্ষ ১৩ হাজার ১০৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চক্রের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা। মামলার আসামিরা হলেন, আবদুল হাফিজ সালাওয়াত, তার স্ত্রী ফয়জুন নেছা, সদরঘাটের আবদুল মাবুদ সওদাগরের ছেলে জাহিদ হোসেন, মো. ইব্রাহীম, মো. ইফতেখার হোসেন, মো. শাহজাদা আলম এবং ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর ছিদ্দিক। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের সবগুলো কটন মিলকে রাষ্ট্রীয়করণ করে সরকার। পরবর্তীতে কটন সেক্টরকে বিরাষ্ট্রীকরণ করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ওইসব মিল আগের মালিকদের পরিচালনার জন্য হস্তান্তর করে বিটিএমসি। তখন পরিচালনাকারীদের সাথে চুক্তি ছিল, কটন মিলগুলো পরিচালনা ও যাবতীয় অর্থনৈতিক পদক্ষেপের জন্য বিটিএমসির অনুমোদন বাধ্যতামূলক। ঋণ নেওয়া, বেচাকেনাসহ যাবতীয় বিষয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির পূর্বানুমতি নেওয়ার শর্ত ছিল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকার এশিয়াটিক কটন মিলের সম্পদ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে। মিলটি বিটিএমসি থেকে পরিচালনার জন্য নিয়ে জাহিদ হোসেন, মো. ইব্রাহীম, মো. ইফতেখার হোসেন, মো. শাহজাদা আলম চার ভাই প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদ সদস্য। তারা মিলে তৃতীয় পক্ষের আবদুল হাফিজ সালাওয়াতকে ব্যবস্থাপনা পরিচালনা বানান। পরবর্তীতে আবদুল হাফিজ সালাওয়াত চারটি দলিলে সরকারি মালিকানাধীন মিলটির জায়গা ১৯৯৯ সালের ১৭ জুন তার স্ত্রী ফয়জুন নেছার নামে দলিল করে নেয়। একইভাবে ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর সিদ্দিকীও মিলের জায়গা নিজের দেখিয়ে মুক্তিনামা দেয়। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মূলত জমির মুল্য ৫৩ লক্ষ টাকার মতো হলেও কারখানার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ছিল। বিটিএমসি থেকে কারখানাটি পরিচালনার জন্য নেওয়ার সময় কারখানাটিতে এক কোটি টাকা মূল্যের মেশিনারিজ ছিল। বিটিএমসির অনুমতি ব্যতিরেখে এসব যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়। কারখানার পুরো স্থাপনা বিক্রি করে দিয়ে জায়গাগুলো আবার ভাড়ায় লাগিয়েছেন আবদুল হাফিজ সালাওয়াত।
মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে আইনী জটিলতা কাটিয়ে মিলের জায়গাটি বিটিএমসি তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিটিএমসি। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন দৈনিক আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে দুদক ঢাকার উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় জালজালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।