চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, আহত ৭

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৭ জুন, ২০২১ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে জড়ালো চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের অনুসারীদের মাঝে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাতজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আর দুজনকে ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত এএসআই শীলব্রত বড়ুয়া।
চিকিৎসাধীন দুজন হলেন ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের আব্দুল্লাহ আল সাইমন ও ডিগ্রি শেষ বর্ষের আবদুল মালেক রুমি। যদিও এ ঘটনায় চারজন আহতের তথ্য দিয়েছে চকবাজার থানা পুলিশ। আহত চারজনই কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমের অনুসারী বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বহিরাগত কয়েকজনকে নিয়ে কলেজের হোস্টেল গেটে আড্ডা দিচ্ছিল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ। এ সময় মাহমুদুল করিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এক শিক্ষার্থী হোস্টেল গেট দিয়ে প্রবেশ করলে সবুজ তার পথ আটকায় এবং কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের কারণ জানতে চায়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সবুজ ওই শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারে এবং বহিরাগতদের নিয়ে তার উপর চড়াও হয়। একটি ছোরাসহ ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তারা।
খবর পেয়ে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম তার অনুসারীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এরপর উভয়পক্ষে প্রায় শ’খানেক তরুণ মারারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাদের কয়েকজনের হাতে দেশীয় বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। পুলিশ এসে ধাওয়া দিলে এক পক্ষ মতি টাওয়ারের সামনে এবং অপরপক্ষ কেয়ারির সামনে অবস্থান নেয়। ঘটনার সময় পুরো এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় এবং আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ কথিত যুবলীগ নেতা ও কিশোর গ্যাং লিডার নূর মোস্তফা টিনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর সভাপতি মাহমুদুল করিম কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী। যদিও কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমের দাবি, সবুজ বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে, এতে তাদের তিন কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অভিযোগ, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও ইংরেজি বিভাগের একটা ভাইভা পরীক্ষা ছিল। সেজন্য সাইমন ক্যাম্পাসে এসেছিল। পরীক্ষা শেষে চলে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন কর্মী দেখা করতে হোস্টেল গেটে যায়। তখন হঠাৎ টিনু ও সবুজের নেতৃত্বে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী তাদের ওপর হামলা করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরো জানান, চকবাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপ-নির্বাচন হবে। সন্ত্রাসী টিনু কাউন্সিলর হতে চায়। সেজন্য বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে শক্তি দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে সভাপতির (মাহমুদুল করিমের) অনুসারীরা ‘টোকাইদের’ নিয়ে প্রত্যেকদিন সন্ধ্যার পর শেরে বাংলা হোস্টেলে মদ ও ইয়াবার আসর বসায় বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছে সুভাষ মল্লিক সবুজ। বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষ এবং পুলিশকে জানিয়ে দেয়াতে ক্ষুব্ধ হয়ে সভাপতির অনুসারীরা বহিরাগত ‘টোকাইদের’ নিয়ে হামলা করেছে বলেও দাবি সবুজের।
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল বলে জানান চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর মাহমুদ। ওসি আজাদীকে বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী ৪ জন আহত হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ লাখ শিক্ষার্থী পাচ্ছেন প্রমোশন
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচন কমিশনের ল্যাপটপ চুরি করে ৫৫ হাজার অবৈধ ভোটার!