পৃথিবীতে রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির প্রাণি । প্রত্যেকটিরই রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। সৌন্দর্যে এদের মধ্যে কোনটির আবার পৃথিবীজোড়া খ্যাতি, কোনটি আবার দেখতে খুবই কুৎসিত। পৃথিবীর সব প্রাণির মধ্যে সবচেয়ে কুৎসিত প্রাণি হল ব্লবফিশ। নামের মতোই এ প্রাণি দেখতেই বড় এবং থলথলে, এক কথায় জঘন্য।
কুৎসিত প্রাণি রক্ষা সংগঠন ‘দ্য আগলি এ্যানিমাল প্রিজারভেশন সোসাইটি’ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি রক্ষায় তাদের মাসকট নির্ধারণে অনলাইনে একটি গণভোটের আয়োজন করে। কুৎসিত প্রাণি দিয়ে মাসকট নির্ধারণে এ সময় ৩ হাজার ভোটের মধ্যে ৭৯৫ ভোটই পড়ে ব্লবফিশের পক্ষে।
তখন থেকে বিশ্বের সব থেকে কুৎসিত প্রাণি ‘ব্লবফিশ’। নামটি শুনলেই চোখের সামনে থলথলে কিছুর ছবি ভেসে উঠে। নামের মতই এই প্রাণিটি দেখতেও বেশ বড় ও থলথলে।
গভীর জলের এই প্রাণিটি দেখতে পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রের পানিতে। মাঝে মাঝে এরা জেলেদের জালে ধরা পড়ে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০-৪০০০ ফিট গভীর জলে এই প্রাণিটির বসবাস। ৩০ সেন্টিমিটার থেকে ছোট এই প্রাণিটি একটি থলথলে ব্যাগের সাথে তুলনা করা চলে। যার অদ্ভুত প্রাণিসুলভ মুখমণ্ডল দিয়েছে এক কুৎসিত রূপ। এই প্রাণিটির মাথার দিক বিশাল আকৃতির থলথলে ব্যাগের মত ও লেজের দিক চিকন। থলথলে পিচ্ছিল শরীরের কারণেই হয়তো একে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা হয়েছে বিশ্বের সবথেকে কুৎসিত প্রাণি হিসেবে।
ভোটের ফলাফলের পর নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে গিয়ে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট সিমন ওয়াট বলেছেন, ‘বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিদের মধ্যে আমাদের একটি কুৎসিত মুখ দরকার ছিল এবং ভোটে মানুষের প্রতিক্রিয়ায় আমি অবাক হয়েছি। অনেকদিন ধরেই সুন্দর প্রাণিরা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু এখন ব্লবফিশ কুৎসিত প্রাণিদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবে, যাদের সবাই ভুলে গিয়েছিল।’ এ্যাঙোলোট (মেঙিকোর এক ধরনের উভচর প্রাণি), কাকাপো (পেঁচাসদৃশ এক ধরনের টিয়া), টিটিকাকা ওয়াটার ফ্রগ (বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ব্যাঙ), প্রোবোসিস মানকিও (দীর্ঘ নাক বিশিষ্ট বানর) গণভোটে এরাও পৃথিবীর অন্যতম কুৎসিত প্রাণি হিসেবে মনোনীত হয়।
অনেকে এই প্রাণিটি সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানেন না। ব্লবফিশের ফোটো দেখে কিন্তু বোঝার উপায় নেই এটি মাছ কিনা। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে খুব গভীর জলে থাকা এই মাছটি জলের প্রচণ্ড চাপ সত্ত্বেও বেঁচে থাকতে পারে, কারণ এর পুরো শরীরে পেশি খুবই কম। তার বদলে ব্লবফিশের শরীরটা নরম মাংসের তৈরি। আর প্রকৃতির এই ‘সারভাইভাল স্ট্র্যাটেজি’র জেরেই ব্লবফিশকে এরকম অদ্ভুত দেখতে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, ব্লবফিশ জলের বাইরে এলে কিন্তু দেখতে অনেকটাই সাধারণ মাছের মতোই। তাই তাকে কুৎসিত প্রাণি আখ্যা দেওয়া নিয়েও আপত্তি আছে অনেকেরই।