চলতি বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে আট হাজার ৭৪৪ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ হাজার ৪৩১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চালের মধ্যে পাঁচ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন আতপ ও দুই হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল রয়েছে। গতকাল রোববার ছিল সরবরাহকারী চালকল মালিকদের সাথে চুক্তির শেষ দিন। এ দিন ১৩১ চালকল মালিক চুক্তি করেছেন। চট্টগ্রামে মোট চালকল আছে ১৬২টি। এবার সরকার নির্ধারিত সংগ্রহ মূল্যে খুশি মিল মালিকরা। তাই তারা চাল সরবরাহে এগিয়ে এসেছেন বলে মনে করে খাদ্য বিভাগ। জানা গেছে, গত আমন মৌসুমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সারা দেশেও একই চিত্র ছিল। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকারি মজুদও কমে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মজুদ বাড়াতে ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সরকারকে চাল সরবরাহে মিলারদের এগিয়ে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে ভাবা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে চাল সংগ্রহে মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার চাল দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন মিলারগণ। আশা করছি, চুক্তি মতো তারা চাল সরবরাহ করবেন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা আশাবাদী।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রতি কেজি আতপ চালের দাম ৩৯ টাকা এবং প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া প্রতি কেজি ধান সংগ্রহ মূল্য ২৭ টাকা। ধান ও চাল আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চট্টগ্রামে ৬২ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। অনুকূল পরিবেশ থাকায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে। গড়ে চার মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন হয়েছে।
আতপ চাল :
চলতি বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে থেকে পাঁচ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এখানে আতপ চালের মিল আছে ১৪২টি। এর মধ্যে ১২০ জন মিল মালিক চাল সরবরাহে চুক্তি করেছেন।
খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি চাল সংগ্রহ করা হবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে। এখানে লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। উপজেলাটিতে মিল আছে ৩৭টি। এছাড়া ফটিছড়ি থেকে ৮৪৫ মেট্রিক টন, রাউজান থেকে ২৪৬ মেট্রিক টন, লোহাগাড়া থেকে ৮৩ মেট্রিক টন, পটিয়া থেকে ৫৬৫ মেট্রিক টন, বাঁশখালী থেকে ৩৯৫ মেট্রিক টন, হাটহাজারী থেকে ১০৯ মেট্রিক টন, চন্দনাইশ থেকে ৮৪ মেট্রিক টন, আনোয়ারা থেকে ৫৯৪ মেট্রিক টন, কর্ণফুলী থেকে ৬৫ মেট্রিক টন, মীরসরাই থেকে ৩৯ মেট্রিক টন, বোয়ালখালী থেকে ৫৭ মেট্রিক টন এবং সাতকানিয়া থেকে ১২৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
পাশাপাশি নগরের পাহাড়তলী থানা থেকে ২১২ মেট্রিক টন, পাঁচলাইশ থানা থেকে ২৮ মেট্রিক টন এবং চান্দগাঁও থানা থেকে ৮৭০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আছে।
সিদ্ধ চাল :
চট্টগ্রামের চারটি উপজেলা থেকে এবার বোরো সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে দুই হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন। উপজেলাগুলোতে সিদ্ধ চালের মিল আছে ২০টি। এর মধ্যে ১১ টি মিলের মালিক চাল সরবরাহে চুক্তি করেছেন।
চার উপজেলার মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে এক হাজার ৩৬৭ মেট্রিক টন, ফটিকছড়ি থেকে ৯৫১ মেট্রিক টন, মীরসরাই থেকে ৩৩৮ মেট্রিক টন এবং পটিয়া থেকে ১৭৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
ধান :
ধান সংগ্রহ করা হবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে। জেলার মধ্যে আনোয়ারা উপজেলা থেকে ৪৯৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া বাঁশখালী থেকে ৮৭০ মেট্রিক টন, বোয়ালখালী থেকে ১৫৭ মেট্রিক টন, চন্দনাইশ থেকে ২৯৭ মেট্রিক টন, ফটিকছড়ি থেকে ৬৭৮ মেট্রিক টন, হাটহাজারী থেকে ৩৯০ মেট্রিক টন, লোহাগাড়া থেকে ৩৩৪ মেট্রিক টন, মীরসরাই থেকে ১৩৮ মেট্রিক টন, পটিয়া থেকে ৩৮৭ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়া থেকে ৬২১ মেট্রিক টন, রাউজান থেকে ৩৮৬ মেট্রিক টন, সাতকানিয়া থেকে ৫৮২ মেট্রিক টন, কর্ণফুলী থেকে ৩২ মেট্রিক টন এবং নগরের পাঁচলাইশ থানা থেকে ৬১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।