মিয়ানমারে সামরিক জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ক্ষমতা দখলকারী সামরিক বাহিনী গণতন্ত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কঠোর হাতে দমনের পদক্ষেপ নিলেও বিক্ষোভকারীরা রাজপথ ছাড়তে নারাজ। বরং শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ধীরে ধীরে আত্মরক্ষা ও পাল্টা জবাব দেওয়ার পথে এগুচ্ছে। আর এক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার ঘরে বানানো অস্ত্র, গুলতি আর পাথর। শনিবার প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলে বলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুরভাবে বিক্ষোভ দমনের কারণে অনেকেই অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতির প্রতি সতর্কতা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১১ সালে সিরিয়ার মতোই এক অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং একটি পুরোপুরি সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে। মিয়ানমারের অনেক নাগরিকের জন্যই ২৭ মার্চ একটি সন্ধিক্ষণ, সেদিন নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ দমনে কমপক্ষে ১৫০ জনকে হত্যা করে। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলোর হিসাবে, ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেটাই ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ দমনাভিযান। তাদের দাবি, এ পর্যন্ত বিক্ষোভ দমনে ৭২৮ জনকে হত্যা এবং কমপক্ষে তিন হাজার জনকে আটক করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াংগনের শহরতলী থারকেতায় এক বিক্ষোভকারী প্রতিবেদকদের জানান, ২৭ মার্চের হত্যাকাণ্ডের পর তারা ২০ জনের একটি দল গড়ে তুলেছেন। কো থি হা নামের ওই বিক্ষোভকারী বলেন, অভুত্থ্যানের পর আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পথেই ছিলাম। কিন্তু যখন তারা এতোগুলো মানুষকে হত্যা করলো, তখন আর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে এগুনো যায় না। আমাদের পাল্টা জবাব দিতে হবে। বিক্ষোভকারীরা হাতে বানানো বন্দুক, পাথর, গুলতি, এয়ারগানের মতো খুবই সাদামাটা অস্ত্র নিয়ে সামরিক বাহিনীর মোকাবেলায় নেমেছে। হাতের কাছে যা পাওয়া যাচ্ছে সেসব উপকরণ দিয়েই অস্ত্র বানাচ্ছে তারা। যেমন এয়ারগান বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পাইপ, গুলি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বল বেয়ারিং। গুলতিতে তারা খেলার গোল মার্বেল বা গোলাকার পাথর ব্যবহার করছে। ঘরে বানানো ধোঁয়া বোমার উপকরণে সাধারণত গান পাউডার বা পটাশিয়াম নাইট্রেট – যা কৃষিতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয় – ব্যবহার করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের এসব অস্ত্র যতোটা না আক্রমণের জন্য তার চেয়ে বেশি আত্মরক্ষামূলক। তাদের এয়ারগান কোন মারণাস্ত্র নয়। কিন্তু এটা দিয়ে ১০০ ফুট দূরের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করা যায়। বিক্ষোভকারীরা এটা ব্যবহার করে মূলত সেনাদের এগিয়ে আসার গতি কিছুটা ধীর করার চেষ্টা করে। পালানোর মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে ধোঁয়া-বোমা ব্যবহার করা হয় যা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সামনে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এসব উদ্ভাবনী অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও আন্দোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে সাংকেতিক শব্দ চালাচালি করছে। যেমন ‘বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে’ মানে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে, অতিথিদের বিরিয়ানি দেওয়া হচ্ছে মানে সেনাদের লক্ষ্য করে বন্দুক ছোড়া হচ্ছে। বিগ বিরিয়ানি অর্থ হলো পাল্টা হামলা হিসেবে একটি আগুন দেওয়ার ঘটনা।