সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। পঁচাত্তুরের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তিত হলে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি হন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা উপ-রাষ্ট্রপতির। কিন্তু, খুনীরা জানত যে, বঙ্গবন্ধুর এই বিশ্বস্ত সেনাপতিকে কোন অবস্থায় বশে আনা যাবে না। তাই, তাদের পছন্দ ছিল খোন্দকার মোশতাককে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতি হওয়ার উম্মত্ত নেশায় বিভোর হয়ে বিশ্বাসঘাতক মোশতাক খুনী ফারুক-রশীদ গংদের সাথে হাত মিলিয়েছিল। সৈয়দ নজরুল ইসলাম চাইলে প্রাণের ভয়ে খুনী মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে পারতেন। কিন্তু জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন, তিনি বিশ্বাসঘাতক নন। বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী মুজিবনগর সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতাত্তোর বঙ্গবন্ধুর সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সিপাহশালার। ১৫ আগস্টের নির্মম ট্র্যাজেডির পরে অভিমানী এই মানুষটিও চাইলে খুনী মোশতাকের মন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু জীবনের বিনিময়ে প্রমাণ করে গেলেন, তিনি বিশ্বাসঘাতক নন। এম মনসুর আলী। মুজিব নগর সরকারের অর্থমন্ত্রী। স্বাধীনতাত্তোর বঙ্গবন্ধুর সরকারের যোগাযোগ, স্বরাষ্ট্র ও পরে প্রধানমন্ত্রী। খুনী মোশতাকের লোভনীয় প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই সাহসী বীর। পরে জেলখানায় খুনীদের বুলেট ও বেয়নেটের আঘাতে প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি বিশ্বাসঘাতক নন। এএইচএম কামারুজ্জামান। মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী। খুনী মোশতাকের সাথে আপোষ না করায় কারাগারে প্রেরিত হন। পঁচাত্তুরের ৩ নভেম্বর জেলের অভ্যন্তরে খুনী মোশতাকের ঘাতক বাহিনীর হাতে জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন, তিনি বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা হিসেবে এই ‘চার স্তম্ভ’ই দেশের স্বাধীকার ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের স্বাধীনতা। আজ ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের সুবর্ণ জয়ন্তীর এ দিনে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর চতুষ্টয়ের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।