লালদিয়ার চর বন্দরের জায়গা, উচ্ছেদ চলবে

বাধাদানকারীদের তালিকা হচ্ছে, কঠোর ব্যবস্থা নিব : নৌ প্রতিমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আমরা অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। এটা বন্দরের জায়গা। বন্দরের প্রয়োজনেই এদের উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যারা বাধা দিচ্ছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গুটিকয়েক মানুষের জন্য বন্দরের সুনাম নষ্ট বরদাশত করা হবে না। গতকাল বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির একটি প্রোগ্রামে অংশ নিতে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম পৌঁছান। বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবেশমুখ। এটা আমাদের সমৃদ্ধ রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের লাইফ লাইন। এ বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। পতেঙ্গা কনটেনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ শেষ পর্যায়ে। আমাদের বে টার্মিনালের অনেক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, সেগুলো চলমান আছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সম্পন্ন করব।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার মতো পৃথিবীর কোনো বন্দরে এত জনবসতি বা যানবাহন চলাচল করে না। আমরা সেই জায়গাগুলো আধুনিকায়ন করতে যাচ্ছি। বিদেশিরা যখন আসেন, যখন দেখেন বন্দরের মধ্যে এত চলাচল, এত বস্তি এত বাড়িঘর তখন আমাদের বন্দর প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর আগে অনেক জায়গা পরিষ্কার করেছি। এখন লালদিয়ার চরে পদক্ষেপ চলছে। এর আগে মহামান্য আদালত বন্দর চেয়ারম্যানকে পর্যন্ত কোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। আমরা একটা জিনিস বলতে চাই- অবৈধভাবে কোনো কিছু দখল করে রাখার সুযোগ নেই। কেউ যদি অপারগ হন, কারও যদি কোনো ঠিকানা না থাকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাদের ঠিকানা দেবেন। কিন্তু অবৈধভাবে যারা দখল করে থাকবেন তাদের আমরা উচ্ছেদ করব। শুধু তাই নয়; যারা এতদিন যাবত এগুলো দখলে রেখে ফায়দা লুটেছে তাদেরও তালিকা তৈরি করেছি। সময় হলে সেসব চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনব।
পুনর্বাসন প্রসঙ্গে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুনর্বাসন আমরা তাদেরই করব যারা গৃহহীন। যারা স্বচ্ছল, যারা চলতে পারেন- তাদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা যাদের পুনর্বাসন করব তাদের তালিকা করা হয়েছে। যারা এখন আছেন তাদের অধিকাংশই ভাড়াটিয়া। কারা এ ধরনের সুযোগ নিয়ে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে সেটির তালিকা করেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যারা বন্দরের মালিকানাধীন জমি ব্যবহার করে অর্থ আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেন প্রতিমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উচ্ছেদ একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বলেছি, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার আমরা হরণ করব না। তবে বন্দর এলাকা পরিষ্কার করে আধুনিক বন্দর গড়তে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা কাউকে প্রভাবশালী মনে করছি না। আমরা মনে করি সরকারই প্রভাবশালী। সরকার ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে। প্রভাবশালীর কথা বলে সুযোগ নেয়ার উপায় নেই। চট্টগ্রামবাসীও চায় চট্টগ্রাম বন্দর আরও আধুনিক হোক।
প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা জানেন লয়েডস লিস্টে কন্টেনার পোর্টে বিশ্বের ৫৮তম জায়গায় স্থান করে নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমরা গ্লোবাল ভিলেজে চলে গেছি। আমাদের আরও জায়গা দরকার। আরও সুস্থ পরিবেশ দরকার। আমাদের তা করতে হবে। সাংহাইসহ উন্নত বন্দরের সঙ্গে আমরা তুলনা করতে শুরু করে দিয়েছি। গুটিকয়েক মানুষের জন্য বন্দরের বহুল কষ্টার্জিত এই সুনাম নষ্ট হবেত দেব না।
সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা লালদিয়ার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের পক্ষে কথা বলা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা কথা বলছেন তারা হয়তো স্থানীয়ভাবে তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ওঠাবসা করেছেন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে তারা কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা যদি আধুনিক করতে চাই তাহলে এসব পদক্ষেপের বিকল্প নেই।
বে টার্মিনাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ টার্মিনাল পিপিপি মডেলে হচ্ছে। অনেক প্রস্তাবনা এসেছে। বন্দর ও দেশের স্বার্থ দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যদি সেই স্বার্থ পূরণ না হয় তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আছে। আমরা আমাদের পদক্ষেপ নেব। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট নির্ধারণ করা আছে ২০২৫ সাল। আশাকরি এর মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারব। আমরা যেহেতু বে টার্মিনালে দৃষ্টি দিয়েছি কাজেই লালদিয়ার দিকে তাকাব না। পিসিটি হয়ে গেছে। বে টার্মিনাল বড় প্রকল্প। আমরা অর্থের অপচয়ের পক্ষে নই। দেশের টাকা, লালদিয়ার জায়গা বন্দরের কাজেই লাগবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে না। একটা সময় বন্দরের সক্ষমতা ছিল না তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেই সুবিধা দিয়েছিলাম। এখন বন্দরের সক্ষমতা আছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন ঈর্ষণীয় পর্যায়ে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
এ সময় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, সদস্য মোহাম্মদ কামরুল আমিন, সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকসহ বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঘাইছড়িতে অফিসে ঢুকে ইউপি সদস্যকে গুলি করে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে টিকা নিলেন আরো ১৫ হাজার