ভ্যাট কর্মকর্তাদের মাসোহারার মাধ্যমে অভিজাত হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে বছরের পর বছর রাজস্ব ফাঁকি চলছে পর্যটন শহর কক্সবাজারে। পর্যটন নগরীতে হোটেল সুবিধা দেয়া চারশত হোটেলের মধ্যে প্রায় তিনশ হোটেলে ভ্যাট ফাঁকিসহ ভ্যাট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের নামীদামী হোটেলগুলোতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সার্কেল কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পর্যটনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে মাসিক চুক্তিতে মাসোহারা আদায়, হয়রানি, চারশটিরও অধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান হতে বিধি অনুযায়ী ভ্যাট আদায় না করে মাসিক মাসোহারা গ্রহণ, তালিকাভুক্ত রেস্টুরেন্টগুলোর নিয়মিত ভ্যাট প্রদান না করা, কক্সবাজার সার্কেলের আওতাধীন প্রায় ১২ হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন ও রাজস্ব প্রদান ব্যতিরেকে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কলাতলীর হোটেল মোটেল জোনসহ বিভিন্ন এলাকা অনিবন্ধিত প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতাভুক্ত না করে মাসোহারা আদায় ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো থেকে টাকার বিনিময়ে ভ্যাট মওকুফ করা হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে জমা হওয়া একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাসের নেতৃত্বে মঙ্গলবার এ অভিযান পরিচালিত হয়। দুদক টিমের সরেজমিন অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
দুদক সূত্র জানায়, কঙবাজারের অস্টারিকো আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, হোটেল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিতভাবে ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশে দুইটি রেজিস্ট্রার ব্যবহার করে আসছে। একটি রেজিস্টারে হোটেলের লেবেল ও রুম প্রকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে সরকার নির্ধারিত ভ্যাটের হিসাব রাখে। অন্য রেজিস্টারে হোটেলের লেবেল ও রুম সংখ্যা কম দেখিয়ে পরস্পর যোগসাজশে ভ্যাট অফিসে মাসোহারা দিয়ে ভ্যাটের টাকা ফাঁকি দিয়ে আসছে। এছাড়া সী উত্তরা আবাসিক হোটেলে দুদক টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের ভ্যাট প্রদানের রেজিস্টার গায়েব করে ফেলে। তবে ভ্যাট সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে ভ্যাট ফাঁকির সত্যতা পাওয়ার বিষয়ে হোটেলটি থেকে কিছু কাগজপত্র জব্দ করে।
এছাড়াও দুদক টিম আরো দুটি রেস্টুেরন্টে অভিযান চালিয়ে জানতে পারে, রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদেরকে মূসক চালান প্রদান না করে, মনগড়া মূসক ধরে বিল করে। এসময় উপস্থিত লোকজন অভিযোগ করে দুদক টিমকে জানায়, খাবারের বিলের সাথে মূসক হিসেবে আদায়কৃত অর্থ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ, কঙবাজার কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে আত্মসাত করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানে অংশ নেয়া দুদকের এক সহকারী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে কঙবাজারের বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক হোটেলে আয়-ব্যয় হিসেবের দুটি রেজিস্টার পাওয়া গেছে। প্রাথমিক সত্যতার প্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে। প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষ অধিকতর অনুসন্ধান করা হবে।’