একই নম্বরের ২টি সিম?

প্রতারণা থেকে যেভাবে বাঁচবেন

সাফ্ফাত আহম্মদ খান | বুধবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৩:১৭ পূর্বাহ্ণ

বেশ কিছুদিন ধরে মোবাইল ফোন দিয়ে প্রতারণার খবর খুব বেশি শোনা যাচ্ছে। একজনের মোবাইল ফোন নম্বরটি ব্যবহার করে অন্যজন অপরাধ করছে অথচ আসল নম্বরটির মালিক বুঝতেই পারছেন না যে তার অগোচরে তার ব্যবহৃত নম্বরটি দিয়ে মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
ব্যাপারটি এমনই যে আপনি যতক্ষণে বুঝতে পারবেন ততক্ষণে আপনি প্রতারিত হয়ে গিয়েছেন কিংবা আপনার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেই হয়ে গিয়েছে মারাত্মক কোনো অপরাধ যার সাথে আপনি কোনোভাবেই যুক্ত নন। কিছুদিন আগে দৈনিক আজাদীর সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন করে কিছু কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছে টাকা চাওয়া হয়। ঘটনাটি তদন্তে জানা যায়, আজাদীর ঐ সাংবাদিকের নাম দিয়ে ফোন করেছে অন্য কেউ এবং আরো মজার ব্যাপার হলো যে মোবাইল ফোন নম্বরটি ব্যবহার করে ফোন করা হয়েছিল তার মালিক ব্যাপারটি জানেনই না।
এ ধরনের ঘটনার ফলে সবার সামনে একটা প্রশ্ন চলে আসে যে টেকনিক্যালি একজনের নম্বর দিয়ে আরেকজনকে কীভাবে কল করা যাবে মানে একই নম্বরের দু’টি সিমকার্ড থাকা কিংবা একই রকম ২টি নম্বর থাকা তো সম্ভব নয়। এখানে প্রতারকরা ২টি পদ্ধতি ব্যবহার করে। প্রথমটি হলো মোবাইল নম্বর স্পুফিং এবং দ্বিতীয়টি হলো সিম ক্লোনিং।
নম্বর স্পুফিং করার ব্যাপারটি হলো আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটির মতো একই নম্বর ইন্টারনেটের বিভিন্ন সফটওয়্যার বা সার্ভিসের মাধ্যমে ভার্চুয়ালভাবে তৈরি করা যার মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে কল দিলে ঐ ক্লোন করা নম্বরটি মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠবে এবং আপনি বা ভিক্টিম বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন যে ফোন কলটি আসল নম্বরটি থেকে এসেছে।
আর দ্বিতীয় ব্যাপারটি হচ্ছে সিম ক্লোনিং করা মানে আপনার সিম কার্ডের অবিকল নকল আরেকটি সিম কার্ড তৈরি করা যা আসল সিম কার্ডটির মতোই কাজ করবে। এই ব্যাপারটি অনেকটা সিডি বা ডিভিডিতে ফাইল কপি করার মতো অর্থাৎ আমরা যেমন আমাদের প্রয়োজনীয় ফাইল ডিভিডিতে কপি করতে একটি খালি ডিস্কের প্রয়োজন পড়ে তেমনি একটি খালি সিম কার্ড যাকে প্লেইন ওয়েফার কার্ড বলা হয় তাতে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে আসল সিম কার্ডের সকল তথ্য হুবহু কপি করা হয় এবং এটি যখন মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয় তা আসল নম্বরটির মতোই কাজ করে। যেমন: ফোন কল, ইনকামিং মেসেজ আদান-প্রদান ইত্যাদি যা আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এর মাধ্যমে আপনার গোপনীয়তা ধ্বংস হয়ে যাবে।
এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে আপনি যা করতে পারেন:
১. প্রথমেই কোনো নম্বর থেকে ফোন আসলে সেটি ভেরিফাই করুন মানে কলটি সঠিক ব্যক্তিটি দিয়েছে কি না তা দেখুন। প্রয়োজনে কল ব্যাক করুন কারণ ইন্টারনেট থেকে যে নম্বর স্পুফিং করা হয় তা শুধু আউটগোয়িংয়ের ক্ষেত্রে কাজ করে।
২. কোনো অবস্থাতেই আপনার সিমটি অন্য কারো হাতে দেবেন না কারণ একজন দক্ষ ব্যাক্তির একটি সিম ক্লোন করতে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। এখানে আরো একটি বিষয় বলে রাখা ভালো সিম কার্ডে ৩ ধরনের এলগরিদম ব্যবহার করা হয়- COMP128v1, COMP128v2 এবং COMP128v3। বর্তমানে শুধু COMP128v1 ক্র্যাক বা ক্লোন করা সম্ভব অন্যগুলো সম্ভব নয়। তাই আপনার সিমটি আপারেটর থেকে আপডেট করে নিলে ভালো হয়।
৩. মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখে অন্য ফোন থেকে কল দিয়ে দেখুন আপনার নম্বরে রিং হচ্ছে কি না।
৪. কল আসলে বা করতে গেলে কল ফেইল হচ্ছে কি না তা চেক করুন।
৫. মোবাইল ফোনে লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। আপনি যদি সন্দেহ করেন যে আপনার সিমটি ক্লোন করা হয়েছে তাহলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিন এবং সেই সাথে অপারেটর থেকে নতুন সিম তুলে নিন।
লেখক: কম্পিউটার হ্যাকিং ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ২৩ কেজি গাঁজাসহ দম্পতি আটক
পরবর্তী নিবন্ধহিযবুত তাহরীরের দুই সদস্যকে চার বছরের কারাদণ্ড