শুল্কহার কমিয়ে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির অনুমতির প্রভাবে কমতে শুরু করেছে চালের বাজার। কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠার পরেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল চালের দাম। অবশেষে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বাধ্য হয়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, একমাত্র বৈধ আমদানিকারকরা চাল আমদানির আবেদন করতে পারবেন। যাচাই বাছাই করে কোন আমদানিকারক কি পরিমাণ আমদানি করতে পারবেন তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া অনুমোদনের পর কে কি পরিমাণ আমদানি করেছেন সেই হিসেবও রাখা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শুল্ক কমানোর পর থেকে তিন ক্যাটাগরির চালের দাম বস্তায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গতকাল নগরীর দুই বৃহৎ চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রভাবে পাইজাম সিদ্ধ, মোটা সিদ্ধ এবং স্বর্ণা সিদ্ধ চালের দাম বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। এছাড়া স্থিতিশীল রয়েছে- জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ এবং কটারিভোগ সিদ্ধ, বেতি আতপ, পাইজাম আতপ, মিনিকেট আতপ, কাটারীভোগ আতপ এবং চিনিগুড়া চাল। এসব চালের সিংহভাগ আসে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং কিশোরগঞ্জের আশুগঞ্জ থেকে।
চালের আড়তদাররা জানান, পাইকারি বাজারে চালের শুল্ক কমানোর প্রভাবে পাইজাম সিদ্ধের দাম বস্তায় ১৫০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া স্বর্ণা সিদ্ধ বস্তায় ২০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা এবং মোটা সিদ্ধ ১০০ টাকা কমে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। অন্যদিকে বর্তমানে নাজিরাশাইল সিদ্ধ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ ২ হাজার ৫০০ টাকা, জিরাশাইল সিদ্ধ ২ হাজার ৯০০ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ২ হাজার ৮০০ টাকায় এবং কাটারি আতপ ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে বেতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং চিনিগুড়া চাল ৪ হাজার ৬০০ টাকা। দাম কমার বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকার শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় কয়েক ক্যাটাগরির চালের দাম কমেছে। বর্তমানে চাল বেচাকেনা কিছুটা কম রয়েছে। আমদানি বাড়লেও অন্যান্য চালের দামও কমে যাবে। চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, শুল্ক কমিয়ে সরকার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ চালের বাজার একপ্রকার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছিল। তবে সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের অবশ্যই দেশের কৃষকের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কারণ কৃষক যদি ধান চালের ন্যায্য দাম না পায়, তাহলে আগামীতে তারা চাষে উৎসাহী হবেন না।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে চালের বাজার নিম্নমুখী। ধানের মণও ১০০-২০০ টাকা কমে গেছে। শুল্ক কমানোর জেরে অনেক ব্যবসায়ী আমদানি করবেন, এতে চালের বাজারে আরো দাম কমে স্থিতিশীল হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ডিসেম্বর চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে ‘নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়’ চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। ওইদিন এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম নিয়ে ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয়, আবার কৃষকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেবল বৈধ আমদানিকারকরা ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আমদানির আবেদন করবেন। সেখান থেকে মন্ত্রণালয় কাকে কী পরিমাণ আমদানি করতে দেবে সেই সিদ্ধান্ত জানাবে। অনুমোদন পাওয়ার পর কে কী পরিমাণ আমদানি করেছে সেই হিসাবও রাখা হবে।