রশিদ চৌধুরী – বাংলাদেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের একজন। আধুনিক শিল্পচর্চায় নিরীক্ষাধর্মী বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সৃষ্টিতে তিনি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশে ট্যাপিস্ট্রি শিল্পমাধ্যমের সার্থক প্রবর্তক বলা হয় তাঁকে। আজ শিল্পীর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
রশিদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ সালের ১ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার রতনদিয়া গ্রামে। তদানীন্তন আর্ট স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি শেষে এই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক নিযুক্ত হন। সরকারি বৃত্তি নিয়ে স্পেন ও ফ্রান্সে উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে বেছে নেন পুরোনো পেশাকে। শিক্ষকতা জীবনে রশিদ চৌধুরী ঢাকা আর্ট কলেজ, ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম চারুকলা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। পাশ্চাত্য শিল্প তাঁর শিল্পী সত্তায় গভীর প্রভাব ফেলে। তথাপি রশিদ লোকজ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য ভোলেন না। তাঁর অধিকাংশ সৃষ্টিতেই এর স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়। ‘সোনাভানু’, ‘ভয়’, ‘বাংলার বিদ্রোহ’ ইত্যাদি শিল্পকর্মের আখ্যানবস্তু আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতি ও লোকগাঁথা নির্ভর।
এছাড়া বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও তাঁর নিজস্ব শিল্পরীতিতে অনন্য রূপে ফুটে উঠেছে। রশিদ চৌধুরীর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে: ‘ধান কাটা’, ‘তরুণী’, ‘চাকমা’, ‘ষড়ঋতু’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘আদম’, ‘কালবৈশাখী’ প্রভৃতি। সুতা, পাট আর রেশম দিয়ে তাঁতের ওপর নিরীক্ষাধর্মী ট্যাপিস্ট্রি মাধ্যমে করা শিল্পীর বেশ কিছু চিত্র কেবল দেশে নয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিও পেয়েছে। শিল্পের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৬ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রয়াত হন শিল্পী রশিদ চৌধুরী।