কবিরা বিষয়বস্তু খুঁজে বেড়ান পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত – মাইল বেগে ছুটে চলে অসীমের পথে! মহাশূন্যের গ্যালাঙি! যেখানে গোলাকার এই গ্যালাঙির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে দুই লাখ বছর। আর কবিরা এক নিমিষেই চোখ বন্ধ করে ইচ্ছেডানায় ভর করে গ্যালাঙি ঘুরে আসেন! গ্রহ, নক্ষত্র, সূর্য সব হাতের মুঠোয়! কলমের ডগায় ভর করে, সূক্ষ্ম চিন্তাকে সাথে নিয়ে চষে বেড়ায় প্রকৃতি, প্রেম, আন্দোলন, ইতিহাস রাজনীতি, বিপ্লব, বিদ্রোহী, সংগ্রাম, কাদা, মাটি, জল, তুচ্ছতা, শোক, পরিতাপের সংস্পর্শে আসে, খুঁজে বেড়ান কবিতার উৎস! বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিচিত্র বিন্যাসে ও ফর্মে লিখে ঢেউ খেলানো ছন্দে উপস্থাপন করা- কবিতায় প্রকৃতি ভোরের আলোর মতো ফোটে, ঝিরিঝিরি বাতাস বয়, অরণ্যের গভীরে পৌঁছে, সহজ সরল সবুজাভ উৎসবে মাতে, বসন্তে রঙবাহারি উৎসবে সাজে শরতের কাশবন বাতাসে দোলে -মন্থর করে হেমন্তের পাতা ঝরা দিনের কথা! প্রেমিক প্রেমিকারা উন্মুক্ত চোখে চোখ রাখে, হাঁটু গেড়ে বসে স্বর্গীয় ভালোবাসাকে অভ্যর্থনা জানায়, সুবাসিত শব্দ গেঁথে মনোরম বাগান গড়ে!
পোড় খাওয়া বিরহকে হৃদয় নিংড়ানো শব্দ দিয়ে ঢেলে সাজায়, পাঠকের চোখের পানি যেন নিংড়ে পড়ে! কবিরা রাজনীতি, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন কাগজ কলমে! কখনো কখনো এই সোচ্চার কাল হয়ে দাঁড়ায়, চার দেয়ালের বন্দি ঘরে বন্দি রাখে দীর্ঘদিন! অতীতের ইতিহাস থেকে জানা যায় অনেক কবিদের নিজ দেশ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হয়েছিলো! তবুও তাদের সাহসী কলমকে থামাতে পারেনি। নীরবে নিভৃতে লিখে কোন না কোন মাধ্যমে বাইরে প্রকাশ করেছেন!
কবিরা রাতের ঘুমের চেয়েও অনুশীলন করে আনন্দ পান বেশি! ইতিহাস, সংগ্রামকে জানতে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অনুশীলন করে! নির্ঘুম রাত, কাগজ আর কাটাকুটির ফসল; অবশেষে মুখে হাসি ফোটায় যখন সেটা পাঠক প্রিয়তাপায়!
কাদা, মাটি হাঁটু-জল সবখানেই কবিদের পদচারণা, কৃষক সেজে শস্য ফলানোর জন্য লাঙ্গলের ফলায় উপযুক্ত ভাবে মাটি তৈরী করে, বীজ ছিটায় -অথচ কবি তখন নিজ স্টাডি রুমে বসে। তুচ্ছতা শব্দটি সহজ ছোট্ট হলেও বুকের ভেতর হাজার বছর গেঁথে থাকে বার বার এই তুচ্ছতাকে মনে করে সৃষ্টি করে একের অধিক তথা ততোধিক কবিতা! কখনো কখনো শোক, তাপ, পরিতাপের বিষয় লিখতে যেয়ে নিজের অজান্তেই চোখের জল উপচে পড়ে, অথচ এই বিষয়গুলো লেখকের নিজের কথা না তবুও কবিদের আবেগী মন ডুকরে কেঁদে ওঠে! আসলে লেখক’রা যেখানেই যায় দৃষ্টিবহর সাথে করে নিয়ে বেড়ায়, প্রাপ্তির থলিতে যতটুকু জোটে শব্দ আর ছন্দের মিশেলে মনের আনন্দে লিখে ফেলেন, কখনো ছোট শস্য দানা কখনো’বা রত্ন পাথর নিয়েও লিখেন! দেখা যায়, অনেক কবি নিজেকে লুকাতে আসল আমিকে লুকিয়ে রাখেন ছদ্ম নামের ভেতরে! এটা করে থাকেন সাধারণত লেখার স্বাধীনতার খাতিরে। কবিদের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়না বললেই চলে কারণ — কবিরা সৃষ্টির নেশায় মত্ত থাকে, অর্থ, সম্পদের কথা ভাবেননা! সৃষ্টিতেই সকল আনন্দ খুঁজে নেন! পৃথিবীর সব কবি সাহিত্যিকদের সাহসী পদচারণা পূর্ণতা পাক, মুখরিত হয়ে উঠুক চারপাশ এই তো কবিদের চাওয়া !