নগরীর মোবাইল ছিনতাইয়ের ১২টি চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি চোরাই মোবাইল কেনা বেচা চক্রের অর্ধশত ব্যবসায়ীর নাম পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। টিম কোতোয়ালী গত দুই দিন ধরে অভিযান চালিয়ে মোবাইল ছিনতাই চক্রের আট সদস্য এবং চোরাই মোবাইল কেনা বেচা চক্রের তিন সদস্যসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করে ২০২টি মোবাইল। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. ফজলুল করিম (৩৫), মো. শাহ আলম (৩০), মহিউদ্দিন (২৭), ইয়াকুব হোসেন সাইমন (১৯), রাজিব হোসেন (২৭), মো. সাজ্জাদ (২২), মিজানুর রহমান রাকিব (২০), মো. শাহাদাত (২২), শাকিল (২৪), দুলাল (২০) এবং রবিন (২৩)। এদের মধ্যে প্রথম তিন জন চোরাই মোবাইল কেনা বেচা চক্রের সদস্য আর বাকিরা ছিনতাইকারী।
দীর্ঘদিন ধরে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন পুরাতন রেল স্টেশন সংলগ্ন চোরাই মার্কেটকে কেন্দ্র করে নগরীর ছিনতাইকারী, ঝাপটাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য নিয়ে টেনশনে ছিল টিম কোতোয়ালী। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী, চোরাই মোবাইল বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করলেও জামিনে ফিরে তারা একই পেশায় জড়িয়ে পড়ে। গত ২ ডিসেম্বর কোতোয়ালীর মোড় থেকে টাইগার পাস মোড় পর্যন্ত এসি কোতোয়ালী নোবেল চাকমার নেতৃত্বে ও ওসি কোতোয়ালী মোহাম্মদ মহসীনের নেতৃত্বে অভিযান চালায় টিম কোতোয়ালী। গতকাল সকালও তা অব্যাহত ছিল। অভিযানে প্রথম ধরা পড়ে মোবাইল ছিনতাইকারী টিমের তিন সদস্য শাকিল, দুলাল ও রবিন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ধরা পড়ে বাকি পাঁচ সদস্য রাজিব, রাকিব, সাজ্জাদ হোসেন, তার ভাই শাহাদাত হোসেন কালু ও ইয়াকুব হোসেন সাইমন। এদের থেকে তিনটি ধারালো ছুরি ও ৯ টি মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশ। এ আটজনের তথ্যমতে পুরাতন রেল স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চোরাই মোবাইল কেনা বেচা চক্রের তিন সদস্য শাহআলম, ফজলুল করিম প্রকাশ ভেজাল করিম ও মহিউদ্দিন। শাহআলম ও ফজলুল করিম থেকে পাওয়া যায় ১৬৪টি মোবাইল। মহিউদ্দিন থেকে পাওয়া যায় ২৯ টি মোবাইল ফোন। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, এদের প্রতিটি গ্রুপে ৬/৭ জন করে রয়েছে। এরা পরস্পর যোগসাজশে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই বা চুরি করে। পরে চোরাই মোবাইল রেলস্টেশন এলাকায় বিক্রি করে। এদের বিরুদ্ধে ২টি মামলা করা হয়েছে। অভিযানে পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান ওসি মহসীন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, কোতোয়ালী এলাকায় চুরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ১২টি গ্রুপ এবং চোরাই মোবাইল বিক্রির সঙ্গে জড়িত আছে ৫০ জন ব্যবসায়ী। ১২টি গ্রুপের লিডাররা হলো হোসেন, আলী, বস লিটন, সাদ্দাম, বাদশা প্রকাশ কালা বাদশা, সাজ্জাদ, রাসেল, রাব্বি, আজম, বাইট্টা ফারুক, সোহাগ ও লম্বা সোহেল।
এসব গ্রুপের সদস্যরা বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বাসে উঠে ৬ জনের একটি টিম। প্রতিটি স্টপেজে তারা ওঠা নামার সময় কৃত্রিম জটলা সৃষ্টি করে পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়। কখনো আবার আইল্যান্ডে থেকে চলন্ত বাসে জানালার পাশে বসা ব্যক্তি মোবাইলে কথা বলার সময় ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়। আবার কখনো অস্ত্রের মুখে মোবাইল ছিনতাই করে।
ওসি মহসীন বলেন, চোরাই মার্কেটে প্রতিটি স্মার্টফোন অর্ধেক দামে বিক্রি করা হয়। বৈধ কাগজপত্র বিহীন এসব মোবাইল ফোন ক্রেতারা নিজেদের অজান্তে বিপদে পড়েন। লোভে পড়ে চোরাই মোবাইল ফোন ক্রয় না করার অনুরোধ জানিয়ে একটু সচেতন হতে পরামর্শ দেন ওসি মহসীন।