ধীরে ধীরে সরব হচ্ছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন। গত ১৮ অক্টোবর বেশ সফলতার সাথে শেষ হয়েছে মুজিব বর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট। এরপর আস্তে আস্তে অন্য ইভেন্ট গুলো চালু করার চেষ্টা করছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। যদিও তারা দৃষ্টি রাখছে করোনার দ্বিতীয় ধাপের দিকে। এদিকে এরই মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়া বিভাগ শেখ রাসেল স্মরণে আয়োজন করতে যাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১১ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। তাও আবার টি-টোয়েন্টি ফরমেটে। এতটুকু বাচ্চাদের দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলিয়ে কি অর্জন করতে চান আয়োজকরা সেটা বুঝা মুশকিল। আর এই টুর্নামেন্টের সার্বিক সহযোগিতা করছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। গতকাল ছিল শেখ রাসেল অনূর্ধ্ব-১১ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া দলগুলোর খেলোয়াড় বাছাই। প্রায় শতাধিক শিশু জড়ো হয়েছিল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। করোনার এই সময়ে গতকালই যেখানে স্কুল কলেজের ছুটি বাড়ানো হয়েছে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা বাচ্চাদের জড়ো করে ডাক্তার দিয়ে বয়স যাচাই করছেন। যেখানে রয়ে যাচ্ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। অবশ্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর বলেন, যেসব বাচ্চা বাছাই পর্বে অংশ নিতে এসেছে তাদের সবাইকে মাস্ক পড়িয়ে ঢুকানো হয়েছে স্টেডিয়ামের ভেতর। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ডাক্তার যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে বাচ্চাদের পরীক্ষা করছেন সে সব কতটা ভাইরাসমুক্ত তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব মিলিয়ে ঝুঁকির মধ্যেই করা হচ্ছে বাচ্চাদের বাছাই কাজ। সরকার যেখানে স্কুল কলেজ বন্ধ রেখে বাচ্চাদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছে সেখানে এভাবে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে কোমলমতি শিশুদের কেন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তার কোনো সদুত্তর মেলেনি।
এতো গেল ১১ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রচেষ্টা। স্টেডিয়ামের ভেতরের যখন এদের ট্রায়াল চলছিল তখন স্টেডিয়ামের বাইরে চলছিল আরেক গ্রুপের ট্রায়াল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬, এবং অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সী ছেলেদেরও বাছাই চলছে। যদিও ক্রিকেট বোর্ডের নির্দেশনা ছিল ছেলেদের কাছ থেকে তাদের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের ভিডিও নিয়ে যাচাই বাছাই করা। সে মোতোবেক তিন বিভাগে প্রায় পাঁচশ’র মত ভিডিও জমা পড়ে বিসিবি নির্ধারিত কোচের কাছে। সেখান থেকে আবার তিন বিভাগের ৫০ জন করে ১৫০ জনকে ডাকা হয় সরাসরি ট্রায়ালে। গতকাল তিন বিভাগের প্রায় ১৩০ জনের মত ট্রায়াল দিয়েছে। সকাল এবং বিকেল দুই ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে এসেছেন তাদের অভিভাবকরা। ফলে একরকম জটলার সৃষ্টি হয় স্টেডিয়ামের বাইরের অংশে। যদিও বিসিবির নির্বাচিত কোচ তারেক হোসেন খান জানান, তারা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাছাই কার্যক্রমটা পরিচালনা করতে। কিন্তু গতকাল দেখা গেছে নেটের ভেতর হয়তো চার কিংবা ছয়জন ক্রিকেটার পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু নেটের বাইরে বাকিরা সবাই গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে অভিভাবকরা যেন আরো বেশি উৎসুক। বেশিরভাগ ছেলে কিংবা অভিভাবকের মুখে নেই কোন মাস্ক। যা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। কিন্তু যারা ট্রায়াল দিচ্ছেন কিংবা ট্রায়াল নিচ্ছেন তারা সবাই যেন নির্বিকার। সবকিছু যেন একেবারেই স্বাভাবিক তাদের কাছে। কোচ তারেক হোসেন খান জানান, ক্রিকেট বোর্ড তাদেরকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে একটি দল চূড়ান্ত করে দিতে বলেছে। যে কারণে তাদের এই ট্রায়াল করতে হচ্ছে। এই বাছাই কার্যক্রম শেষে অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে ৪০ জন, অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগে ৩৫ জন এবং অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে ৩৫ জনের তালিকা দেওয়া হবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে। এরপর হবে ডাক্তারি পরীক্ষা। সেখানে থেকে যাচ্ছে ঝুঁকি। সব মিলিয়ে করোনার ঝুঁকিতেই চলছে বাচ্চাদের নিয়ে ক্রিকেট আয়োজনের মহোৎসব।