ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার। কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছিল। গত বছর ভারত যখন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল, দেশে এর দাম রেকর্ড তিনশ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদার প্রায় ৫৭ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা বিদেশ থেকে, প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। এ কারণেই পেঁয়াজের ব্যাপারে ভারত কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের বাজারে। এছাড়া মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, চীন থেকেও বাংলাদেশে অল্প কিছু পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে। খবর বিবিসি বাংলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের চাহিদার পুরোটা পূরণ করতে হলে দেশে অন্তত ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন করতে হবে। তাহলে যেটুকু নষ্ট হবে, তা বাদ দিয়ে বাকি পেঁয়াজ দিয়ে দেশের পুরো চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করতে না পারার পেছনে কয়েকটি কারণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব। পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে হলে বীজের উৎপাদন ও সংরক্ষণ বাড়াতে হবে। এছাড়া আখের ক্ষেতে, ভুট্টার ভেতর, আদা-হলুদের সঙ্গে পেঁয়াজ চাষ করা যায়। গরমের সময় কচুমুখীর ক্ষেতে চাষ করা যায়।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ চাষাবাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হলো এর দামের ওঠানামা। কৃষকের চাষাবাদের খরচ বিবেচনায় রেখে মিয়ানমারের মতো পেঁয়াজের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত, যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। লাভজনক হলে প্রতি বছরই কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হবেন, ঘাটতিও কমে আসবে। এছাড়া সারা বছরের চাহিদা মেটানোর মতো পেঁয়াজ উৎপাদিত করতে হলে সেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র বর্তমানে পেঁয়াজের ছয়টি জাত অবমুক্ত করেছে। তার মধ্যে তিনটি জাত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত। এসব গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করলে সেটা চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান দিতে পারে। এছাড়া দেশে বিস্তীর্ণ চর এলাকা রয়েছে। সেসব জমি যদি পেঁয়াজ উৎপাদনে কাজে লাগানো যায়, তাহলে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদার ১০ লক্ষ টনের পুরোটা উৎপাদন করা সম্ভব।
গবেষকরা বলছেন, সঠিক নীতি, পরিকল্পনা আর উদ্যোগে কয়েক বছরের মধ্যেই পেঁয়াজের ঘাটতি শূন্যে নেমে আসতে পারে।