৯ দিনের কর্মযজ্ঞ নিয়ে আসছে চীনা টিম

চমেক হাসপাতালে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় প্রস্তাবিত স্থান চূড়ান্ত হওয়ার তথ্য জানা গেছে আগেই। সরেজমিন পরিদর্শন পরবর্তী সার্বিক তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনা শেষে প্রস্তাবিত জায়গাটি চূড়ান্ত করে চীনা কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ‘চমেক হাসপাতালের বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট : গোঁয়াছি বাগানের স্থানই চূড়ান্ত/চলতি মাসেই আসছে চীনা টিম’ শিরোনামে একটি প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আজাদী। চলতি মাসের শেষ দিকে একটি চীনা টিম চট্টগ্রামে আসার কথা জানানো হয় প্রতিবেদনে। অবশেষে ৫ সদেস্যর চীনা টিম আগামী মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে আসছেন। অবশ্য এর দুদিন আগেই (২৬ ফেব্রুয়ারি) চীনা এ টিম ঢাকায় পৌঁছাবে। এসব তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন ও চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। চীনের প্রতিনিধি দলটি ২৮ ফেব্রুয়ারি এসে ৯দিন চট্টগ্রামে অবস্থান করবেন বলেও নিশ্চিত করেছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫ সদেস্যর একটি টিম ঢাকায় পৌঁছাবেন। একজন স্থপতির (আর্কিটেক্ট) নেতৃত্বে চীনা এ টিমে থাকছেন এয়ার কন্ডিশন এন্ড ভেন্টিলেশন ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, অনুবাদক এবং জিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকায় পৌঁছার পরদিন (২৭ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তাঁরা মতবিনিময় করবেন। মন্ত্রণালয়ে বৈঠক পরবর্তী শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন এসময় তাদের সাথে থাকবেন।

পরদিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) চীন দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ এ টিম চট্টগ্রামে আসবেন। তাদের ৯ দিনের কর্মসূচিতে চূড়ান্তকৃত স্থানে সার্ভে, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিণষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সুবিধা, যোগাযোগ সুবিধাসহ সার্বিক দিক পর্যালোচনা করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে মতবিনিময়ের কথাও রয়েছে এ টিমের। সার্বিক কার্যক্রম শেষ করে ৯ মার্চ তারা ঢাকায় ফিরে যাবেন। ১০ মার্চ এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।

চীনা টিমের কর্মসূচি জেনে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, তারা ৯ দিন চট্টগ্রামে অবস্থান করবেন। আর যে ৯দিন থাকবেন, প্রত্যেক দিনই তাদের সিডিউল করা আছে। মোটকথা তারা সবকিছু দেখবেন। নিজেরা যাচাই করবেন। তাদের অনেক কোয়ারিও থাকতে পারে। এজন্য আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চীনা টিমের সফর উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি সভা আহ্বান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যেখানে হাসপাতাল প্রশাসনের কর্মকর্তা, সিনিয়র বেশ কয়জন চিকিৎসক ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলেই ছিলেন। বৈঠকে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট নির্মাণে সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

এদিকে, চীনা টিম মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আসলেও ডা. সামন্ত লাল সেন আসছেন শুক্রবার।

এ তথ্য নিশ্চিত করে সারাদেশে বার্ন চিকিৎসা সমপ্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন গতকাল আজাদীকে বলেন, তারা (চীনা টিম) চট্টগ্রামে অনেক দিন (৯দিন) থাকবেন। প্রথম দিকে তারা সাইট দেখে সার্ভে করবেন। সার্বিক দিক দেখবেন। কয়েকদিন পর তারা তাদের প্রপোজাল সাবমিট করবেন। ওই সময় আমরা যাবো। মন্ত্রণালয় থেকেও কয়েকজন যেতে পারে। শুক্রবার সকালে হয়তো আমরা পৌঁছবো।

প্রসঙ্গত, বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে অতি সমপ্রতি নতুন চারটি সাইট নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা পাঠায় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসব সাইটের মধ্যে রয়েছেহাসপাতালের আওতাভূক্ত চট্টেশ্বরী সড়কের পার্শ্ববর্তী গোঁয়াছি বাগান এলাকা, চট্টেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পার্শ্বে খালি জায়গা, হাসপাতালের পিছন দিকে অঙিজেন প্লান্ট সংলগ্ন খালি জায়গা ও হাসপাতালের এনসিলিয়ারি ভবনের পশ্চিম পার্শ্বের (ডা. মিজান হোস্টেলের উত্তর দিকে) খালি জায়গা। তবে প্রথম দুটি সাইট (গোঁয়াছি বাগান ও প্রধান ছাত্রাবাসের পার্শ্ববর্তী) হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল সংলগ্ন দুটি সাইটে জায়গার পরিমাণ পর্যাপ্ত নয় বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় শেষের দুটি প্রস্তাবনা (হাসপাতাল কম্পাউন্ডে) ভাবনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আর গোয়াঁছি বাগান টার্গেট রেখেই এ প্রস্তাবনা এগিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের (২০২২ সালের) ১১ জুন চাইনিজ টিমের দুই প্রকৌশলীকে গোঁয়াছি বাগানে প্রস্তাবিত জায়গা ঘুরে দেখানো হয়। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ীপ্রস্তাবিত ২ নম্বর সাইটে প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পার্শ্বে বা পিছনের জায়গাটিতে (গোঁয়াছি বাগান এলাকার) বিশেষায়িত এই বার্ন ইউনিট স্থাপন করা সম্ভব বলে মতামত দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ। ইউনিটটি স্থাপনে মোট সাড়ে তিন হাজার বর্গ মিটার জায়গার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানায় তারা। যদিও প্রস্তাবিত এ জায়গাটির নতুন করে সীমানা স্পষ্টকরণ এবং সেখানে থাকা বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা স্থানান্তর বা সরানোর বিষয়ে আরো তথ্য চায় চীনা কর্তৃপক্ষ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) প্রদত্ত এক চিঠিতে চীনা কর্তৃপক্ষ দ্রুত এসব তথ্য জানানোর অনুরোধ করে। ঢাকাস্থ চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে চায়না কিউওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে গত ৪ জুলাই এ চিঠি দেয়া হয়। ইআরডিকে প্রদত্ত চিঠিতে চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়তাদের বিশেষজ্ঞ দল প্রস্তাবিত চারটি সাইটেরই সম্ভাব্যতা পর্যালোচনা করেছে। এর মধ্যে জায়গা স্বল্পতার কারণে তিনটি সাইট (, ৩ ও ৪ নম্বর) বার্ন ইউনিট স্থাপনে উপযুক্ত নয়। প্রস্তাবিত ২ নম্বর সাইটটিতে বার্ন ইউনিট স্থাপন করা সম্ভব। তবে সাইটটির সীমানা ম্যাপসহ পুনরায় স্পষ্টকরণের পাশাপাশি সেখানে থাকা বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা স্থানান্তর বা সরানোর বিষয়ে তথ্য জানাতে বলা হয় চিঠিতে। চাহিত তথ্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দলের সমন্বয়ে পরবর্তী অগ্রবর্তীমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে চীনা কর্তৃপক্ষ।

চীনা কর্তৃপক্ষের এই চিঠি পাওয়ার পরপরই চমেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর হাফিজুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কমিটির মতামত ও সুপারিশ সংযুক্ত করে ২৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ফিরতি চিঠি পাঠানো হয়। নতুন করে সীমানা ম্যাপসহ প্রস্তাবিত জায়গায় থাকা বিভিন্ন স্থাপনা সরানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট করা হয় চিঠিতে। চীনা কর্তৃপক্ষ যেসব বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল, তা সুস্পষ্ট করে জবাব দেয়া হয় জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, তাদের যেসব বিষয়ে কোয়ারি ছিল, চিঠিতে আমরা তা পয়েন্ট আকারে স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে প্রস্তাবিত জায়গায় যেসব স্থাপনা রয়েছে, তা সরানোর বিষয়ে আমরা সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা দিয়েছি। প্রস্তাবিত জায়গাটিতে আসলে বৈধ কোন স্থাপনা নেই।

চমেক হাসপাতালের ফিরতি চিঠির পরই বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে প্রস্তাবিত জায়গাটি এক প্রকার চূড়ান্ত করে চীনা কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ওই জায়গা ঘিরেই বাজেট প্রাক্কলন ও ডিজাইনের কাজে হাত দেয় তারা। পাশাপাশি চলতি মাসের মধ্যেই একটি টিম পুনরায় চট্টগ্রামে আসার কথা জানায় চীনা কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত ১১ জুন চীনের দুই প্রকৌশলী এসে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় নতুন প্রস্তাবিত জায়গাটি পরিদর্শন করেন। এসময় চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত, গণপূর্ত বিভাগের (ইমারত) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাহেদুন নবী চৌধুরীসহ অন্যান্যরা সাথে ছিলেন। হাসপাতালের আওতাভূক্ত চট্টেশ্বরী সড়কের পার্শ্ববর্তী গোঁয়াছি বাগান এলাকা এবং চট্টেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পার্শ্বে খালি জায়গা ঘুরে দেখানো হয় তাদের। পরিদর্শনকালীন প্রস্তাবিত জায়গার ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ করেন চীনের দুই প্রকৌশলী। তারও আগে (৬ জুন)

ডা. সামন্ত লাল সেনও সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে প্রস্তাবিত এ জায়গা পরিদর্শন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধকালুরঘাট সেতু মেরামতের টেন্ডার আগামী মাসে