৫ সচিব, কক্সবাজারের ডিসি ও মেয়রসহ ১৫ জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিশ

বাঁকখালী নদী রক্ষায় পদক্ষেপ না নেয়া

কক্সবাজার প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৪ জুন, ২০২২ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী রক্ষায় হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও প্যারাবন কেটে নদী দখল, কক্সবাজার পৌরসভার সমস্ত আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষণ অব্যাহত রাখা এবং পূর্বের দখলদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ৫ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও মেয়রসহ ১৫ সরকারি কর্মকর্তাজনপ্রতিনিধিকে আদালত অবমাননা হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)

নোটিশে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রতিপালন করে বাঁকখালী নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা, নদীটিকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে নদী ও নদী সংলগ্ন প্যারাবনে নির্মিত ও নির্মিতব্য সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সাথে কঙবাজার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বদর মোকাম এলাকার কস্তুরাঘাট নামক স্থানে এ নদীতে বিদ্যমান প্যারাবন সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত প্যারাবনের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা নিরূপণসাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও প্যারাবনকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না গতকাল সোমবার ডাকযোগে এ চিঠি পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ আগামী ১৬ জুন সকাল ১০ টার মধ্যে বেলার আইনজীবীকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।

যাদেরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে তারা হলেনভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন, কঙবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, কঙবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মুফিদুল আলম ও কঙবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা, কঙবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কঙবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনা (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান। বেলার পক্ষ থেকে দেওয়া নোটিশে আরও বলা হয়েছে, কঙবাজার জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত বাঁকখালী নদীকে সংরক্ষণ করতে ও অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে নদীকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০১৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (রিট মামলা নং৮৩২৫/১৪) দায়ের করে। উক্ত মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ বাঁকখালী নদীর দখলদারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দেন। এছাড়া চিংড়ি অথবা তামাক চাষের উদ্দেশ্যে উল্লিখিত নদীর যে কোনও অংশ বা নদীর তীর কাউকে ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাঁকখালী নদীকে কেন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং সি এস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার ও দূষণকারীর হাত থেকে কেন নদীকে সংরক্ষণ করা হবে নাএই মমের্ও রুল নিশি জারি করেন।

আইনজীবী হাসানুল বান্না বলেন, পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার শুনানিকালে আদালত কঙবাজার পৌরসভার মেয়রকে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য না ফেলতে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপরও বাঁকখালী নদীতে এখনও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রয়েছে। রয়েছে নদী দখলের প্রতিযোগিতা যা সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বাঁকখালী নদী বর্তমানে দখল ও দূষণে জর্জরিত। সম্প্রতি কঙবাজার পৌরসভার বাঁকখালী নদী সংলগ্ন কস্তুরাঘাট এলাকায় প্যারাবন কেটে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। অধিকন্তু নদী হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ব্যক্তি নামে রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার পরিচায়ক।

পরিবেশ অধিদপ্তর কঙবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। তারপরও প্যারাবন দখল ও দূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে নিয়মিত অভিযানও চালানো যাচ্ছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রত্যাবাসন ঠেকাতে মুহিবুল্লাহকে খুন করে আরসা
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে পাহাড় কেটে প্লট বাণিজ্য